View All Notes
NOTICE

Saturday, May 24, 2025

প্রশ্নোত্তর -১ : দ্বাদশ শ্রেণী রাষ্ট্র বিজ্ঞান


জাতি গঠনের প্রত্যাহ্বানসমূহ
রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর


১. প্রশ্নঃ ভারতবর্ষ স্বাধীনতা লাভের অব্যবহিত পর যে প্রত্যাব্বানের সম্মুখীন হয়েছিল সেই সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা কর। 


অথবা 


প্রশ্নঃ স্বাধীনতার সময় ভারতকে গ্রহণ করতে বাধ্য হওয়া তিনটি প্রত্যাহ্বানের বিষয়ে বর্ণনা কর। 


অথবা


প্রশ্নঃ স্বাধীনতার পর ভারতে তাৎক্ষণিকভাবে সম্মুখীন হওয়া দু'টি প্রত্যহ্বানের বিষয়ে সংক্ষেপে আলোচনা কর। 


উত্তর : ভারতবর্ষ ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতা অর্জনের পরপরই তিনটি প্রত্যাহ্বানের সম্মুখীন হয়। এগুলো  হলো- (ক) জাতীয় ঐক্য ও সংহতি প্রতিষ্ঠা করা। (খ) দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা। (গ) আর্থিক বিকাশ সাধন করা।


জাতীয় ঐক্য ও সংহতি স্থাপন: ভারত এক বিশাল দেশ, যেখানে বিভিন্ন জাতি, ভাষা, ধর্ম ও সংস্কৃতির সমন্বয়ে এক বৈচিত্র্যময় সমাজ বিরাজমান। স্বাধীনতার পর এই বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য স্থাপন এবং দেশের অখণ্ডতা রক্ষা করা ছিল একটি বৃহৎ প্রত্যাহ্বান। দেশভাগের তিক্ত অভিজ্ঞতা, সাম্প্রদায়িক সংঘাত এবং দেশীয় রাজ্যগুলোর একীকরণের জটিলতা এই কাজকে আরও দুরূহ করে তুলেছিল। 


গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা: ভারতীয় সংবিধান দেশকে একটি সার্বভৌম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। তবে, বহুত্ববাদী সমাজে প্রত্যেক নাগরিকের মৌলিক অধিকার, যেমন স্বাধীনতা, সমতা ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা এবং সামাজিক-অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে গণতান্ত্রিক আদর্শ বাস্তবায়ন ছিল এক জটিল দায়িত্ব। অশিক্ষা ও সামাজিক বৈষম্যের মধ্যেও গণতন্ত্রের ভিত্তি মজবুত করা ছিল অপরিহার্য। 


আর্থিক বিকাশ সাধন করা: স্বাধীনতার সময় ভারতের অর্থনীতি ছিল কৃষিনির্ভর এবং দারিদ্র্য ছিল ব্যাপক। জনসাধারণের জীবনমান উন্নয়ন, দারিদ্র্য দূরীকরণ এবং শিল্পায়নের মাধ্যমে সমবিকাশ ও সমান উন্নয়নের ধারা গড়ে তোলা ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ। 


২. প্রশ্নঃ ভারত বিভাজনের পরিণতি সমূহ বিশ্লেষণ কর।


উত্তরঃ ভারত বিভাজনের পরিণতিসমূহঃ দ্বি-জাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাজন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম হয়। এই বিভাজনের পরিণতি ছিল অত্যন্ত নির্মম এবং হৃদয় বিদারক, যা নিম্নে আলোচনা করা হলো:


সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা: ভারত বিভাজনের ফলে সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ তীব্র আকার ধারণ করে।  কলকাতা এবং পাঞ্জাবের অমৃতসর শহর সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার প্রধান কেন্দ্রে পরিণত হয়। পাঞ্জাব ও বঙ্গদেশের বিভাজনের কারণে এই অঞ্চলগুলোতে হিন্দু, মুসলিম ও শিখ সম্প্রদায়ের মধ্যে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। এই দাঙ্গায় অসংখ্য মানুষ প্রাণ হারান এবং সম্পত্তির ব্যাপক ক্ষতি হয়।


শরণার্থী সমস্যা: দেশভাগের অন্যতম গুরুতর পরিণতি ছিল সীমান্তের দুই পারে শরণার্থী সমস্যা। ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা উভয় দেশে সাম্প্রদায়িক আক্রমণের শিকার হন। ফলে লক্ষ লক্ষ মানুষ তাদের ঘরবাড়ি, সম্পত্তি ও জীবনের সঞ্চয় ছেড়ে শরণার্থী হতে বাধ্য হন। পাঞ্জাব ও বঙ্গদেশ থেকে হিন্দু ও শিখরা ভারতে, এবং মুসলমানরা পাকিস্তানে পালিয়ে যান। এই শরণার্থী সংকট উভয় দেশের অর্থনীতি ও সমাজের ওপর গভীর প্রভাব ফেলে।


সংখ্যালঘু সমস্যা:  দেশভাগের ফলে উভয় দেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি হয়। ভারতে মুসলিম এবং পাকিস্তানে হিন্দু ও শিখ সংখ্যালঘুরা সাম্প্রদায়িক হিংসা ও বৈষম্যের শিকার হন। 


৩. প্রশ্নঃ দ্বি-জাতি তত্ত্ব সংক্ষেপে ব্যাখ্যা করো। 


উত্তরঃ দ্বি-জাতি তত্ত্ব: এটি হল এমন একটি ধারণা যার ভিত্তিতে ভারতে হিন্দু-মুসলমান দু'টি জাতির উদ্ভব ঘটে। এই তত্ত্বের প্রধান প্রবক্তা ছিলেন মুসলিম লীগ নেতা মোহাম্মদ আলি জিন্নাহ। ১৯৪০ সালে মুসলিম লীগের লাহোর অধিবেশনে (লাহোর প্রস্তাব) এই তত্ত্ব আনুষ্ঠানিকভাবে গৃহীত হয়, যেখানে মুসলমানদের জন্য পৃথক রাষ্ট্রের দাবি উত্থাপিত হয়। এই ধারণার ভিত্তিতে ১৯৪৭ সালে তৎকালীন ব্রিটিশ সরকারের শেষ ভাইসরয় লর্ড মাউন্টব্যাটেন একটি বিভাজন পরিকল্পনা গ্রহণ করেন, যার লক্ষ্য ছিল হিন্দু ও মুসলমানদের জন্য দুটি পৃথক রাষ্ট্র গঠন করা। এই পরিকল্পনার ফলস্বরূপ ভারত উপমহাদেশকে ধর্মের ভিত্তিতে বিভক্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। অবশেষে, ১৯৪৭ সালের ১৪-১৫ অগাস্ট মধ্যরাতে ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি স্বাধীন রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়, যার একটি ছিল হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ ভারত এবং অপরটি ছিল মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ পাকিস্তান। এই বিভাজন দ্বি-জাতি তত্ত্বের বাস্তবায়ন হিসেবে ইতিহাসে চিহ্নিত হয় এবং এর ফলে উপমহাদেশের লক্ষ লক্ষ মানুষ বাস্তুহারা হন এবং সাম্প্রদায়িক হিংসার শিকার হন। ভারতীয় উপমহাদেশে এটি এক গভীর প্রভাব বিস্তারকারী ঘটনা হয়ে উঠে।


৪. প্রশ্নঃ ভারত বিভাজনের প্রক্রিয়া, নীতি ও সমস্যাগুলো আলোচনা কর।


উত্তরঃ ভারত বিভাজনের প্রক্রিয়াঃ  দ্বি-জাতি তত্ত্বের ধারণার ওপর ভিত্তি করে লর্ড মাউন্ট ব্যাটেনের পরিকল্পনা অনুসারে ভারত বিভাজন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। এই প্রক্রিয়া সম্পর্কিত নীতি ও সমস্যাগুলি নিম্নরূপ-


দেশ বিভাজনের নীতি:- দেশ বিভাজনের ক্ষেত্রে সংখ্যাগরিষ্ঠতার নীতি অনুসরণ করা হয়েছিল। অর্থাৎ যে সব অঞ্চলে মুসলিমরা সংখ্যাগরিষ্ঠ সে সব অঞ্চল নিয়ে পাকিস্থান রাষ্ট্র গড়ে উঠে এবং অবশিষ্টাংশ ভারতের সঙ্গে থাকে।


দেশ বিভাজন সম্পর্কিত সমস্যাঃ-(ক) বৃটিশ ভারতে এমন কোন বলয় ছিল না যেখানে মুসলিমরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ। ফলে প্রদত্ত নীতি অনুসারে দেশ বিভাজনের ক্ষেত্রে সমস্য সৃষ্টি হয়। অবশেষে পশ্চিম ও পূর্ব পাকিস্তান দুটি পৃথক ভূখণ্ড নিয়ে পাকিস্তান গঠনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।


(খ) মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চলের অনেক নেতারা দেশ বিভাজনের বিরোধী ছিলেন। তন্মধ্যে দক্ষিণ-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশের অবিসংবাদি নেতা খান আব্দুল গফফুর খানের ভূমিকা বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য। এই বিরোধীতার জন্যও দেশ বিভাজনে সমস্য সৃষ্টি হয়। 


(গ) পাঞ্জাব ও বাংলার মতো প্রদেশে মুসলিম ও অমুসলিম জনসংখ্যা মিশ্র ছিল।  নীতি অনুসারে এই রাজ্যগুলো দ্বিখণ্ডিত হয়। ফলে সীমান্তের দুই পারে সংখ্যালঘু সমস্যা সৃষ্টি হয়। যথা-(i) দুই দেশের সংখ্যালঘুরা সাম্প্রদায়িক আক্রমণের লক্ষ্য হয়ে উঠেন। (ii) উভয় প্রান্তে লক্ষ লক্ষ সংখ্যালঘু নিজেদের ঘর-বাড়ি ছেড়ে শরণার্থী হলেন।


৫. প্রশ্নঃ জাতীয় নেতৃবৃন্দ কেন ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের ধারণা পোষণ করেছিলেন ? কারণ দর্শাও ।


উত্তরঃ  ভারতবর্ষ একটি বৈচিত্র্যময় দেশ, যেখানে বিভিন্ন ধর্ম, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের মানুষ একসঙ্গে বসবাস করেন। যদিও ভারতের স্বাধীনতা ধর্মের ভিত্তিতে অর্জিত হয়েছিল, তবুও এই বহুত্ববাদী সমাজে জাতীয় ঐক্য ও সংহতি প্রতিষ্ঠা, সেইসঙ্গে গণতন্ত্রের সফল বাস্তবায়নের জন্য ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি গ্রহণ অপরিহার্য বলে বিবেচিত হয়েছিল। আমাদের জাতীয় নেতৃবৃন্দ মনে করতেন, ধর্ম ও রাজনীতির পৃথকীকরণের মাধ্যমে দেশের সকল শ্রেণি ও সম্প্রদায়ের মানুষের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক উন্নয়ন নিশ্চিত করা সম্ভব। 


ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের ধারণা ভারতের সাংবিধানিক গণতন্ত্রের মূল ভিত্তি হিসেবে কাজ করেছে। এই নীতি গ্রহণের মাধ্যমে জাতীয় নেতৃবৃন্দের লক্ষ্য ছিল একটি প্রগতিশীল, সাম্যবাদী ও সর্বধর্ম সমন্বয়ের রাষ্ট্র গড়ে তোলা। এর ফলে, ভারতের সংবিধান সকল নাগরিকের ধর্মীয় স্বাধীনতা, সমতা ও ন্যায়বিচারের অধিকার সুনিশ্চিত করেছে। ধর্মনিরপেক্ষতার এই আদর্শ শুধুমাত্র জাতীয় ঐক্যকে সুদৃঢ় করেনি, বরং সমাজের সামগ্রিক উন্নয়ন ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। 


এই ধারণার পেছনে আমাদের জাতীয় নেতৃবৃন্দের দূরদর্শী চিন্তাভাবনা ও প্রতিশ্রুতি ছিল একটি সুষম, ন্যায়ভিত্তিক ও প্রগতিশীল ভারত গঠনের, যেখানে ধর্ম, বর্ণ বা শ্রেণি নির্বিশেষে সকল মানুষ সমানভাবে উন্নতির সুযোগ পাবে।


৬. প্রশ্নঃ বৃটিশ ভারতীয় প্রদেশ বলতে কি বোঝায় ? প্রদেশসমূহ দেশীয় রাজ্য থেকে কিভাবে পৃথক ছিল?


উত্তরঃ ব্রিটিশ ভারতীয় প্রদেশ: যেসব প্রদেশসমূহ সম্পূর্ণরূপে বৃটিশ সংসদ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ছিল সেগুলোকে বৃটিশ ভারতীয় প্রদেশ বলা হত। এই প্রদেশ সমূহের কোন ধরনের স্বাধীনতা ছিল না। 


দেশীয় রাজ্যের সাথে পার্থক্য:  

শাসন ব্যবস্থা: ব্রিটিশ ভারতীয় প্রদেশগুলোতে সরাসরি ব্রিটিশ শাসন ছিল, যেখানে গভর্নর বা অন্যান্য ব্রিটিশ কর্মকর্তারা প্রশাসন পরিচালনা করতেন। দেশীয় রাজ্যগুলোতে স্থানীয় শাসকরা অভ্যন্তরীণ শাসন পরিচালনা করতেন, তবে ব্রিটিশ রেসিডেন্ট বা এজেন্টের তত্ত্বাবধানে।  


স্বায়ত্তশাসন: ব্রিটিশ প্রদেশগুলোর কোনো স্বায়ত্তশাসন ছিল না, কিন্তু দেশীয় রাজ্যগুলোর শাসকরা সীমিত স্বাধীনতা ভোগ করতেন।  


আইন ও নীতি: ব্রিটিশ প্রদেশে ব্রিটিশ আইন ও নীতি প্রযোজ্য ছিল, যেখানে দেশীয় রাজ্যে স্থানীয় ঐতিহ্য ও আইন অনুসরণ করা হতো, যদিও ব্রিটিশদের অনুমোদন প্রয়োজন হতো।  


সামরিক নিয়ন্ত্রণ: দেশীয় রাজ্যগুলোর নিজস্ব সামরিক বাহিনী থাকতে পারত, তবে তা ব্রিটিশদের নিয়ন্ত্রণাধীন ছিল। ব্রিটিশ প্রদেশে সরাসরি ব্রিটিশ সেনাবাহিনী মোতায়েন থাকত।  





Post Top Ad

Pages

SoraTemplates

Best Free and Premium Blogger Templates Provider.

Buy This Template