View All Notes
NOTICE

Tuesday, May 27, 2025

রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রশ্নোত্তর - ০৩ : দ্বাদশ শ্রেণী || HS - প্রস্তুতি

 ১. প্রশ্নঃ সবুজ কি? এর ফলাফল সংক্ষেপে আলোচনা করো।


অথবা 


সবুজ বিপ্লবের ইতিবাচক ও নেতিবাচক ফলাফল আলোচনা করো।


উত্তরঃ  সবুজ বিপ্লবঃ ১৯৬০-এর দশকে ভারতে কৃষিখন্ডে আধুনিক প্রযুক্তি, উন্নত বীজ ও সার প্রয়োগের ফলে কৃষি উৎপাদন ব্যাপক বৃদ্ধি পায়। অতি অল্প সময়ে কৃষিখন্ডে বৈপ্লবিক পরিবর্তনের জন্য একে সবুজ বিপ্লব বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে।


মূলত তৃতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা চলাকালীন বিদ্যমান খাদ্য সংকট মোকাবিলার জন্য সবুজ বিপ্লবের সূচনা হয়। তখন ভারতের বিভিন্ন জেলাকে নিবিড় কৃষি জেলা প্রকল্পের আওতায় আনা হয়। কৃষিকার্যে নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার, উন্নত মানের বীজ ও সার প্রয়োগ, পর্যাপ্ত জলসেচের সুযোগ-সুবিধা, ইত্যাদি এই বিপ্লবের প্রধান কারণ ছিল।


সবুজ বিপ্লবের ইতিবাচক ফলাফলঃ (ক) উৎপাদন বৃদ্ধি - সবুজ বিপ্লবের ফলে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। ফলে দেশ খাদ্যশস্য স্বনির্ভর হয়ে ওঠে। (খ) কর্মসংস্থান বৃদ্ধি - সবুজ বিপ্লবের সময় নতুন প্রযুক্তির ব্যবহারের ফলে দেশে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পায়। 


সবুজ বিপ্লবের নেতিবাচক ফলাফলঃ (ক) কৃষিক্ষেত্রে নতুন প্রযুক্তির সুবিধা কেবলমাত্র বৃহৎ চাষীরা অধিক পরিমাণে ভোগ করেছে। নতুন প্রযুক্তি অধিক ব্যয়সাধ্য বলে ছোট ছোট চাষীরা এর সুবিধা গ্রহণ করতে পারেনি। (খ) সবুজ বিপ্লবের প্রথম পর্যায়ে পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তর প্রদেশ, প্রভৃতি গম উৎপাদক এলাকাগুলি অধিক উন্নত হয়। অন্যান্য এলাকায় উৎপাদন বৃদ্ধি না পাওয়ার ফলে আঞ্চলিক বৈষম্য বৃদ্ধি পায়।


২. প্রশ্নঃ সবুজ বিপ্লবের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ফলাফল আলোচনা করো।


উত্তরঃ  সবুজ বিপ্লবঃ ১৯৬০-এর দশকে ভারতে কৃষিখন্ডে আধুনিক প্রযুক্তি, উন্নত বীজ ও সার প্রয়োগের ফলে কৃষি উৎপাদন ব্যাপক বৃদ্ধি পায়। অতি অল্প সময়ে কৃষিখন্ডে বৈপ্লবিক পরিবর্তনের জন্য একে সবুজ বিপ্লব বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। মূলত তৃতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা চলাকালীন বিদ্যমান খাদ্য সংকট মোকাবিলার জন্য সবুজ বিপ্লবের সূচনা হয়। তখন ভারতের বিভিন্ন জেলাকে নিবিড় কৃষি জেলা প্রকল্পের আওতায় আনা হয়। কৃষিকার্যে নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার, উন্নত মানের বীজ ও সার প্রয়োগ, পর্যাপ্ত জলসেচের সুযোগ-সুবিধা, ইত্যাদি এই বিপ্লবের প্রধান কারণ ছিল।


সবুজ বিপ্লবের অর্থনৈতিক ফলাফল: খাদ্যশস্য উৎপাদন বৃদ্ধি অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা আনে এবং আমদানি নির্ভরতা কমায়। তবে ছোট চাষীদের বঞ্চনা ও আঞ্চলিক বৈষম্য অর্থনৈতিক অসমতা বাড়ায়।


সবুজ বিপ্লবের রাজনৈতিক ফলাফল : সবুজ বিপ্লব সরকারের কৃষিনীতির সাফল্য প্রদর্শন করলেও, আঞ্চলিক ও সামাজিক বৈষম্যের কারণে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও কৃষক আন্দোলনের প্রেক্ষাপট তৈরি হয়।


৩. প্রশ্নঃ ভারতে পরিকল্পনা আযোগের ভূমিকা আলোচনা করো।


উত্তরঃ ভারতে পরিকল্পনা আয়োগের ভূমিকাঃ ভারতে পরিকল্পনা আয়োগের ভূমিকা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী পণ্ডিত জওহরলাল নেহেরুর নেতৃত্বে ১৯৫০ সালে পরিকল্পনা আয়োগ গঠিত হয়। এটি মূলত একটি পরামর্শদাতা সংস্থা, যার কাজ হলো দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য পরিকল্পনা তৈরি করা এবং পরামর্শ প্রদান করা। এই আয়োগ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের দায়িত্ব সরাসরি বহন করে না।


পরিকল্পনা আয়োগের প্রধান কাজগুলো হলো:

(ক) দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন ক্ষেত্রে উৎপাদন বৃদ্ধির একটি সুসংহত রূপ প্রদান করা;

(খ) দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ, মূলধন ও মানবসম্পদের পূর্ণ ব্যবহারের ব্যবস্থা করা;

(গ) দেশের সম্পদের সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করে অপচয় বন্ধ করা;

(ঘ) উৎপাদিত দ্রব্যের যথাযথ বণ্টন নিশ্চিত করা;

(ঙ) দেশের জন্য পরিকল্পনার খসড়া প্রস্তুত করা।


এসব ক্ষেত্রে পরিকল্পনা আয়োগ ভারতের অর্থনৈতিক উন্নয়নে একটি কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করেছে।  ২০১৪ সালে এই আয়োগটিকে বিলুপ্ত করা হয়েছে। 


৪. প্রশ্নঃ ভারতের স্বাধীনতার গোড়ার দিকে পরিকল্পিত উন্নয়নের সঙ্গে জড়িত বিতর্কগুলি সম্পর্কে আলোচনা করো।


অথবা 


স্বাধীনতার সমযে উন্নয়নের প্রতি বিভিন্ন মনোভাবগুলি কি ছিল? তর্কের কি অবসান হয়েছিল?


উত্তরঃ উন্নয়নের ধারণার/ পরিকল্পনার সঙ্গে জড়িত বিতর্কঃ স্বাধীনতার পর ভারতের উন্নয়ন পরিকল্পনা নিয়ে দুটি প্রধান বিতর্ক দেখা দেয়। প্রথম বিতর্ক ছিল ব্যক্তিগত খণ্ড বনাম সরকারি খণ্ড। একদিকে কেউ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মত পুঁজিবাদী মডেলকে সমর্থন করছিল, অন্যদিকে সোভিয়েত ইউনিয়নের সমাজতান্ত্রিক মডেলের দ্বারা অনুপ্রাণিত একটি বড় অংশ সরকারি খণ্ডকে অগ্রাধিকার দিতে চাইছিল। পণ্ডিত জওহরলাল নেহেরুর নেতৃত্বে ভারত শেষ পর্যন্ত এই দুই ধারার সমন্বয়ে মিশ্র অর্থনীতি গ্রহণ করে, যেখানে সরকার ও ব্যক্তি খণ্ড উভয়ই অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখে।


দ্বিতীয় বিতর্ক ছিল কৃষি বনাম শিল্প। কেউ শিল্পায়নকে অগ্রাধিকার দিতে চাইলেও, অন্যরা কৃষি ও গ্রামীণ অর্থনীতির উন্নয়নকে প্রথম শর্ত হিসেবে দেখেছিলেন। জে.সি. কুমারাপ্পা গ্রামীণ শিল্পায়নের পক্ষে ছিলেন, আর কৃষক নেতা চৌধুরী চরণ সিং কৃষির উন্নতিতে গুরুত্ব দেন। অবশেষে ভারতে প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় কৃষি এবং দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় শিল্পায়নকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। 


এভাবে স্বাধীনতার পর প্রথম দশকে ভারত পরিকল্পিত উন্নয়ন সম্পর্কিত বিভিন্ন বিতর্কের সাক্ষী হয়। 


৫. প্রশ্নঃ দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার সময়ে উদ্যোগীকরণ ও কৃষি বিকাশের মধ্যে উদ্ভব হওয়া বিতর্কের মূল বিষয়গুলি আলোচনা করো।


উত্তরঃ দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা (১৯৫৬-১৯৬১) ছিল ভারতের অর্থনৈতিক পরিকল্পনার এক গুরুত্বপূর্ণ পর্ব, যার মূল লক্ষ্য ছিল দ্রুত শিল্পায়ন। তবে পরিকল্পনার সময়ে প্রধানত উদ্যোগীকরণ বনাম কৃষি বিকাশ নিয়ে বিতর্কের উদ্ভব দেখা দেয়। গান্ধীবাদী অর্থনীতিবিদ জে. সি. কুমারাপ্পা গ্রামীণ শিল্পায়নের পক্ষে ছিলেন, চৌধুরী চরণ সিং কৃষি উন্নয়নের পক্ষে, আবার অনেকেই শিল্পায়নের মাধ্যমে জাতীয় আয় বৃদ্ধিকে বেশি কার্যকর মনে করতেন। অবশেষে, এই পরিকল্পনায় পরিকল্পনায় ভারী ও মৌলিক শিল্প গড়ে তোলার উপর সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়। এই পরিকল্পনার খসড়া প্রস্তুত করেন অর্থনীতিবিদ প্রশান্ত চন্দ্র মহলানবিশের নেতৃত্বে একদল বিশেষজ্ঞ। শিল্পায়নের মাধ্যমে দারিদ্র্য দূরীকরণ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং সামরিক শক্তি বৃদ্ধির লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়। যদিও শিল্প খাতে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়, কৃষি খাতকেও অবহেলা করা হয়নি। খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে সেচ, কৃষি উপকরণ ও প্রযুক্তির উন্নয়নের দিকেও লক্ষ্য রাখা হয়। 


৬. বিশ্বায়নের যুগে পরিকল্পনা কতটা প্রাসঙ্গিক? আলোচনা করো।


উত্তরঃ বিশ্বায়ন ও পরিকল্পনাঃ বিশ্বায়ন প্রক্রিয়ার যেমন কিছু ইতিবাচক প্রভাব আছে, তেমনই কিছু নেতিবাচক প্রভাবও রয়েছে। বিশ্বায়নের ফলে বহুজাতিক সংস্থা অর্থাৎ কোম্পানিসমূহের সারা বিশ্বে এখন বাড়বাড়ন্ত। যার ফলে বিভিন্ন ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ বহুল পরিমাণে হ্রাস পেয়েছে। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বে-সরকারি খন্ডের দাপট পরিলক্ষিত হচ্ছে। অথচ বে-সরকারি খন্ড দ্বারা নিয়ন্ত্রিত মুক্তবাজার অর্থনীতির একমাত্র লক্ষ্য হচ্ছে মুনাফা অর্জন করা। এদিকে অর্থনীতি শব্দটি মানব সমাজের সঙ্গে জড়িত। সুতরাং অর্থনৈতিক উন্নয়ন বলতে আমরা মানব কল্যাণকেই বুঝি। অতএব, যেহেতু বাজার অর্থনীতির একমাত্র লক্ষ্য হল মুনাফা অর্জন করা, তাই মানব কল্যাণের লক্ষ্যে সরকারের আর্থিক পরিকল্পনার গুরুত্ব অপরিসীম। সুতরাং বর্তমান প্রেক্ষাপটে কল্যাণকামী রাষ্ট্রের ধারণাটি প্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েছে। 


কিন্তু লক্ষণীয় যে, বিশ্বায়নের ফলে কোন কোন রাষ্ট্রের পরিকল্পনা গ্রহণ ও রূপায়ণ কিছুটা হলেও প্রাসঙ্গিকতা হারিয়েছে। যেমন- বিশ্ব ব্যাংক ও বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার মতো আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহ অধিকাংশ রাষ্ট্রে বিধি-নিয়ম তৈরি করে দেয়। এমন পরিস্থিতিতে কোন রাষ্ট্রের আইন ও সংবিধান বে-সরকারি মতানুসারে পরিবর্তিত হয়। কোন কোন রাষ্ট্রের সরকারকে শ্রমিক স্বার্থ রক্ষাকারী আইন, পরিবেশ সুরক্ষা আইন ইত্যাদি পরিত্যাগে বাধ্য করানো হয়। কোন রাষ্ট্রের পরিকল্পনার ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। অর্থাৎ বিশ্বায়নের যুগে অনেক রাষ্ট্রকে বিশ্ব ব্যাংক, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা মতো আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহ কর্তৃক আরোপিত শর্তাবলীর উপর নির্ভর করতে হয়। ফলে একথা পরিষ্কার যে, বিশ্বায়নের প্রভাব বিভিন্ন রাষ্ট্রের পরিকল্পনা গ্রহণ ও রূপায়ণ কিছুটা হলেও প্রাসঙ্গিকতা হারিয়েছে।


৭. ভারতে মিশ্র অর্থনীতির প্রবর্তন সম্পর্কে আলোচনা করো।


উত্তরঃ ভারতে আর্থিক পরিকল্পনা/মিশ্র অর্থনীতি রূপায়ণ প্রক্রিয়াঃ স্বাধীনতার পর ভারতের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য কোন নীতি গ্রহণ করা হবে তা নিয়ে মতভেদ ছিল। তবে একটা বিষয়ে ঐকমত্য ছিল যে, শুধু ব্যক্তিগত খন্ডের উপর দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়া উচিত নয়, বরং সরকারের প্রধান ভূমিকা থাকা উচিত। ১৯৪৪ সালে দেশের শীর্ষ শিল্পপতিদের একটি দল বোম্বাই পরিকল্পনা নামে একটি প্রস্তাব তৈরি করে, যেখানে বিনিয়োগে রাষ্ট্রের নেতৃত্বকে সমর্থন করা হয়। 


এরপর ১৯৪৮ সালে পণ্ডিত নেহেরু পার্লামেন্টে ঔদ্যোগিক নীতি প্রস্তাব পেশ করেন। এই প্রস্তাব অনুযায়ী সামরাস্ত্র, পারমাণবিক গবেষণা ও রেল রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে রাখা হয় এবং অন্যান্য শিল্পে রাষ্ট্রীয় ও ব্যক্তিগত যৌথ উদ্যোগ চালু হয়। ১৯৫০ সালে কেন্দ্রীয় ক্যাবিনেটের সিদ্ধান্তে পরিকল্পনা কমিশন গঠন করা হয়, যা পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা প্রণয়নের মূল দায়িত্ব পায়। সরকারের এই পরিকল্পনার মাধ্যমে উন্নয়নের জন্য সমাজতন্ত্র ও পুঁজিবাদের সমন্বিত মডেল গৃহীত হয়। এভাবে ভারতে আর্থিক পরিকল্পনা রূপায়ণ ও মিশ্র অর্থনীতির ভিত্তি স্থাপিত হয়।

Post Top Ad

Pages

SoraTemplates

Best Free and Premium Blogger Templates Provider.

Buy This Template