View All Notes
NOTICE

Tuesday, May 27, 2025

পরিকল্পিত উন্নয়নের রাজনীতি (১)

 পরিকল্পিত উন্নয়নের রাজনীতি 

➡ একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে দেশের সকল প্রকার সম্পদের সদ্ব্যবহার করে নির্দিষ্ট পরিমাণ উৎপাদন বৃদ্ধি করাকে অর্থনৈতিক পরিকল্পনা বলে।

➡ দেশের সম্পদকে পরিকল্পিতভাবে সদ্ব্যবহার করে সমাজের সর্বশ্রেণীর মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন নিশ্চিত করাকে পরিকল্পিত উন্নয়ন বা বিকাশ বলে।


আর্থিক পরিকল্পনাঃ রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা ও বিতর্ক 

➡ স্বাধীনতার পর অর্থনৈতিক উন্নয়নের সিদ্ধান্তে ওড়িশায় ইস্পাত কারখানা স্থাপন নিয়ে জনজাতি ও পরিবেশবাদীদের সঙ্গে সরকারের মতবিরোধ দেখা দেয়। এতে উন্নয়নের সাথে সামাজিক ন্যায় বিচারের প্রশ্ন জড়িয়ে পড়ে এবং রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা সৃষ্টি হয়।

➡ বিশ্বব্যাপী ইস্পাতের চাহিদা যখন বাড়ছে, তখন ওড়িশার প্রচুর পরিমাণে অব্যবহৃত আকরিক লোহা বিনিয়োগের জন্য আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে। রাজ্য সরকার এই সুযোগকে কাজে লাগাতে আন্তর্জাতিক ও দেশীয় ইস্পাত প্রস্তুতকারীদের সঙ্গে সমঝোতার (MOU) চুক্তি করে, যাতে মূলধন বিনিয়োগ বৃদ্ধি পায় ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়।

➡ ওড়িশায় ইস্পাত কারখানা স্থাপনের জন্য রাজ্য সরকার ও POSCO কোম্পানির মধ্যে সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। 

➡ POSCO-র সম্পূর্ণ নাম- Pohang Steel Company.

➡ স্থানীয় জনজাতিরা আশঙ্কা করেছিলেন যে, শিল্প স্থাপনের দরুন তারা বাস্তু ও বৃত্তিচ্যুত হবেন। তাই তারা কোম্পানি ও ওড়িশা সরকারের মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তি বাতিলের জন্য প্রতিবাদ করেছিলেন।

➡ ওড়িশায় ইস্পাত কারখানা স্থাপন নিয়ে পরিবেশবাদীরা বনধ্বংস, দূষণ ও জীবিকা হানির আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন।

➡ ওড়িশার উপজাতীয় অঞ্চলে শিল্প স্থাপন নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার ভাবছিলেন যে, সেখানে শিল্প স্থাপন করতে না পারলে তা খারাপ উদাহরণ হবে ও দেশে বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত হবে।

➡ জনগণের মধ্যে সমান এবং যথাযথ সম্পদের বন্টনকে বিতরণাত্মক ন্যায় বলে। বিতরণাত্মক ন্যায় কার্যকর করতে না পারলে সমাজের সর্বশ্রেণীর লোকের উন্নয়ন হবে না।

➡ বাম ও দক্ষিণঃ বাম বলতে এমন দলকে বোঝায় যারা দরিদ্র ও নিপীড়িতদের পক্ষে এবং এইসব শ্রেণীর উন্নয়নের জন্য সরকারি প্রচেষ্টা সমর্থন করে। দক্ষিণ বলতে তাদেরকে বোঝায় যারা বিশ্বাস করে যে, কেবলমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বীতা ও বাজার অর্থনীতি উন্নতি আনতে পারে এবং সরকারের অপ্রয়োজনীয়ভাবে অর্থনীতিতে হস্তক্ষেপ করা উচিত নয়।

➡ উন্নয়নের ধারণার/ পরিকল্পনার সঙ্গে জড়িত বিতর্কঃ 

স্বাধীনতার পর ভারতের উন্নয়ন পরিকল্পনা নিয়ে দুটি প্রধান বিতর্ক দেখা দেয়। প্রথম বিতর্ক ছিল ব্যক্তিগত খণ্ড বনাম সরকারি খণ্ড। একদিকে কেউ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মত পুঁজিবাদী মডেলকে সমর্থন করছিল, অন্যদিকে সোভিয়েত ইউনিয়নের সমাজতান্ত্রিক মডেলের দ্বারা অনুপ্রাণিত একটি বড় অংশ সরকারি খণ্ডকে অগ্রাধিকার দিতে চাইছিল। পণ্ডিত জওহরলাল নেহেরুর নেতৃত্বে ভারত শেষ পর্যন্ত এই দুই ধারার সমন্বয়ে মিশ্র অর্থনীতি গ্রহণ করে, যেখানে সরকার ও ব্যক্তি খণ্ড উভয়ই অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখে। দ্বিতীয় বিতর্ক ছিল কৃষি বনাম শিল্প। কেউ শিল্পায়নকে অগ্রাধিকার দিতে চাইলেও, অন্যরা কৃষি ও গ্রামীণ অর্থনীতির উন্নয়নকে প্রথম শর্ত হিসেবে দেখেছিলেন। জে.সি. কুমারাপ্পা গ্রামীণ শিল্পায়নের পক্ষে ছিলেন, আর কৃষক নেতা চৌধুরী চরণ সিং কৃষির উন্নতিতে গুরুত্ব দেন। অবশেষে ভারতে প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় কৃষি এবং দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় শিল্পায়নকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। এভাবে স্বাধীনতার পর প্রথম দশকে ভারত পরিকল্পিত উন্নয়ন সম্পর্কিত বিভিন্ন বিতর্কের সাক্ষী হয়। 

➡ বিকাশের মানদন্ডঃ বিকাশের দুটি মান দন্ড আছে। একটি হল উদার পুঁজিবাদ এবং অন্যটি হল সমাজবাদী মানদন্ড।

➡ পরিকল্পিত বিকাশকে কেন্দ্র করে সৃষ্টি হওয়া দুটি বিতর্ক- (ক) কৃষি বনাম শিল্প (খ) সরকারি খন্ড বনাম বে-সরকারি খন্ড।

➡ যেসব খন্ডে সরকারি নিয়ন্ত্রণ থাকেনা, অর্থাৎ ব্যক্তিগতভাবে পুঁজি বিনিয়োগ করতে পারা যায় সেইসব খন্ডকে ব্যক্তিগত খন্ড বলে।

ব্যক্তিগত খন্ড ও সরকারি খন্ডের মধ্যে পার্থক্য নিম্নরূপঃ 

(ক) ব্যক্তিগত খন্ড হল পুঁজিবাদী ক্ষেত্র ও নীতি অনুসরণ করা ব্যবস্থা এবং সরকারি খন্ড হল সমাজবাদী ক্ষেত্র ও নীতি অনুসরণ করা ব্যবস্থা।

(খ) ব্যক্তিগত খন্ড রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত। কিন্তু সরকারি খন্ড রাষ্ট্রীয় নীতি-নিয়মের আওতাধীন।

(গ) ব্যক্তিগত খন্ডের কোন সামাজিক দায়বদ্ধতা নেই। অন্যদিকে সরকারি খন্ড সর্বদা জনগণের নিকট দায়বদ্ধ থাকে।

➡ স্বাধীনতার পর ভারতের গ্রহণ করা অর্থনৈতিক বিকাশের তিনটি বৈশিষ্ট্যঃ 

(ক) মিশ্র অর্থনীতি।

(খ) পরিকল্পিত বিকাশ।

(গ) কৃষি খন্ডের বিকাশ ও উদ্যোগীকরণ।


মিশ্র অর্থনীতি 

➡ মিশ্র অর্থনীতি হল সমাজবাদ ও পুঁজিবাদের মধ্যবর্তী ব্যবস্থা। এই ব্যবস্থায় সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগ পাশাপাশি থাকে। ভারতে রেলব্যবস্থা রাষ্ট্রীয় মালিকানার উদ্যোগের উল্লেখযোগ্য উদাহরণ। ব্যাংক ব্যবস্থার ক্ষেত্রে সরকারি ও বেসরকারি - উভয় প্রকার উদ্যোগ লক্ষ্য করা যায়।

➡ ভারতে মিশ্র অর্থব্যবস্থা বিদ্যমান রয়েছে।

➡ ভারতে আর্থিক পরিকল্পনা/মিশ্র অর্থনীতি রূপায়ণ প্রক্রিয়াঃ স্বাধীনতার পর ভারতের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য কোন নীতি গ্রহণ করা হবে তা নিয়ে মতভেদ ছিল। তবে একটা বিষয়ে ঐকমত্য ছিল যে, শুধু ব্যক্তিগত খন্ডের উপর দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়া উচিত নয়, বরং সরকারের প্রধান ভূমিকা থাকা উচিত। ১৯৪৪ সালে দেশের শীর্ষ শিল্পপতিদের একটি দল বোম্বাই পরিকল্পনা নামে একটি প্রস্তাব তৈরি করে, যেখানে বিনিয়োগে রাষ্ট্রের নেতৃত্বকে সমর্থন করা হয়। 


এরপর ১৯৪৮ সালে পণ্ডিত নেহেরু পার্লামেন্টে ঔদ্যোগিক নীতি প্রস্তাব পেশ করেন। এই প্রস্তাব অনুযায়ী সামরাস্ত্র, পারমাণবিক গবেষণা ও রেল রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে রাখা হয় এবং অন্যান্য শিল্পে রাষ্ট্রীয় ও ব্যক্তিগত যৌথ উদ্যোগ চালু হয়। ১৯৫০ সালে কেন্দ্রীয় ক্যাবিনেটের সিদ্ধান্তে পরিকল্পনা কমিশন গঠন করা হয়, যা পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা প্রণয়নের মূল দায়িত্ব পায়। সরকারের এই পরিকল্পনার মাধ্যমে উন্নয়নের জন্য সমাজতন্ত্র ও পুঁজিবাদের সমন্বিত মডেল গৃহীত হয়। এভাবে ভারতে আর্থিক পরিকল্পনা রূপায়ণ ও মিশ্র অর্থনীতির ভিত্তি স্থাপিত হয়।

➡ ১৯৪৪ সালে বৃহৎ শিল্পপতিদের একটি শাখা মিলিত হয়ে দেশে পরিকল্পিত অর্থনীতি স্থাপনের জন্য যৌথভাবে একটি প্রস্তাবের খসড়া প্রস্তুত করে। এটাকে বলা হত বোম্বাই পরিকল্পনা।

➡ বোম্বে পরিকল্পনা-(ক) উদ্যোগের ক্ষেত্রে রাজ্যের মালিকানাস্বত্বকে সমর্থন করেছিল। (খ) কয়েকজন প্রথম সারির শিল্পপতি তৈরি করেছিল। (গ) পরিকল্পনার ধারণাটিকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করেছিল। [(ঘ) ভারতের ভবিষ্যৎ অর্থনীতির রূপরেখা ছিল না।

➡ মানবেন্দ্রনাথ রায় দশম বার্ষিকী পরিকল্পনার রূপরেখা প্রস্তুত করেছিলেন। তিনি কৃষির বিকাশ ও ভোগ্য পণ্যের উপর গুরুত্ব আরোপ করে এই পরিকল্পনা প্রস্তুত করেছিলেন।


পরিকল্পনা আয়োগ

➡ পরিকল্পনা কমিশন ভারত সরকারের একটি প্রতিষ্ঠান৷ এই প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন কার্যক্রমে ভারতের পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছিল।

➡ ১৯৫০ সালে (১৫ মার্চ) পরিকল্পনা আয়োগ গঠন করা হয়েছিল।

➡ পরিকল্পনা আয়োগের প্রথম অধ্যক্ষ ছিলেন পন্ডিত জওহরলাল নেহেরু।

➡ পরিকল্পনা আয়োগের কাঠামোঃ পরিকল্পনা আয়োগ প্রধানমন্ত্রী, উপ-সভাপতি এবং ৯/১০ জন সদস্য নিয়ে গঠিত। প্রধানমন্ত্রী পদাধিকার বলে আয়োগের সভাপতি।

➡ পরিকল্পনা কমিশনের সভাপতিঃ ভারতের প্রধানমন্ত্রী পদাধিকার বলে আয়োগের সভাপতি ছিলেন।

➡ ভারতে পরিকল্পনা আয়োগের ভূমিকাঃ ভারতে পরিকল্পনা আয়োগের ভূমিকা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী পণ্ডিত জওহরলাল নেহেরুর নেতৃত্বে ১৯৫০ সালে পরিকল্পনা আয়োগ গঠিত হয়। এটি মূলত একটি পরামর্শদাতা সংস্থা, যার কাজ হলো দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য পরিকল্পনা তৈরি করা এবং পরামর্শ প্রদান করা। এই আয়োগ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের দায়িত্ব সরাসরি বহন করে না।

পরিকল্পনা আয়োগের প্রধান কাজগুলো হলো:

(ক) দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন ক্ষেত্রে উৎপাদন বৃদ্ধির একটি সুসংহত রূপ প্রদান করা;

(খ) দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ, মূলধন ও মানবসম্পদের পূর্ণ ব্যবহারের ব্যবস্থা করা;

(গ) দেশের সম্পদের সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করে অপচয় বন্ধ করা;

(ঘ) উৎপাদিত দ্রব্যের যথাযথ বণ্টন নিশ্চিত করা;

(ঙ) দেশের জন্য পরিকল্পনার খসড়া প্রস্তুত করা।

এসব ক্ষেত্রে পরিকল্পনা আয়োগ ভারতের অর্থনৈতিক উন্নয়নে একটি কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করেছে। ২০১৪ সালে এই আয়োগটিকে বিলুপ্ত করা হয়েছে। 

➡ সংবিধানে উল্লেখ না থাকায় পরিকল্পনা আয়োগকে সংবিধান বহির্ভূত বলা হয়।

➡ ১৯৯১ সালে ভারতের নতুন আর্থিক নীতি প্রবর্তন করা হয়েছিল। ডঃ মনমোহন সিং এর মুখ্য স্থপতি ছিলেন।

➡ ২০১৪ সালে ভারতের পরিকল্পনা কমিশন (আয়োগ) বিলুপ্ত হয়।

➡ বর্তমানে ভারতের অর্থনৈতিক সংস্থাটির নাম- নীতি আয়োগ।

➡ NITI -এর সম্পূর্ণ নাম- (National institution for transforming India).

➡ ১ জানুয়ারি, ২০১৫ সালে নীতি (NITI) আয়োগ স্থাপনা করা হয়।


Post Top Ad

Pages

SoraTemplates

Best Free and Premium Blogger Templates Provider.

Buy This Template