ভারতের অর্থনৈতিক পরিকল্পনাঃ ধারণা, উদ্দেশ্য এবং প্রাসঙ্গিকতা
➡ আর্থিক পরিকল্পনা সম্বন্ধে ধারণা ১৯৪০ ও ১৯৫০এর দশকে সারা পৃথিবীজুড়ে যথেষ্ট জনসমর্থন পায়।
➡ ১৯৩৪ সালে ভারতীয় চিন্তাবিদ এম বিশ্বেশ্বর পরিকল্পনার উপর গুরুত্ব দিয়েছিলেন।
➡ জাতীয় পরিকল্পনা সমিতি ১৯৩৭ সালে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এর সভাপতি ছিলেন পন্ডিত জওহরলাল নেহেরু।
➡ ভারতে পরিকল্পনার ধারণাটি সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে গ্রহণ করা হয়েছে।
➡ আর্থিক বিকাশের জন্য ভারতে পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছিল।
➡ আর্থিক পরিকল্পনার উদ্দেশ্য হল- (ক) আর্থিক বিকাশ (খ) দারিদ্র দূরীকরণ। (গ) জাতীয় আয় এবং মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি করা (ঘ) অর্থনৈতিক বৈষম্য দূরীকরণ (ঙ) দ্রুত উদ্যোগীকরণ (চ) বেকার সমস্যা দূরীকরণ (ছ) খাদ্য ও শিল্পজাত কাঁচামালে স্বাবলম্বী হওয়া।
➡ পরিকল্পনার দুটি সুবিধা নিম্নরূপঃ
(ক) পরিকল্পনার মাধ্যমে আর্থিক বিকাশের লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব।
(খ) পরিকল্পনার মাধ্যমে সমাজ থেকে দারিদ্র ও বৈষম্য দূর করা যায়।
➡ উন্নয়নের ক্ষেত্রে পরিকল্পনার গুরুত্বঃ ভারতবর্ষ প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর। এই দেশের জনসংখ্যা বিশাল। প্রায় ২০০ বছর ব্রিটিশ শাসনাধীন থাকার ফলে এদেশের আর্থিক উন্নয়ন স্থবির হয়ে পড়েছিল। স্বাধীনতার পর দেশের সম্পদকে সদ্ব্যবহার করে সমাজের সর্বশ্রেণীর মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন নিশ্চিত করার জন্য অর্থনৈতিক পরিকল্পনার গুরুত্ব দেখা দিয়েছিল। কেননা, (ক) পরিকল্পনার মাধ্যমে আর্থিক বিকাশের লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব।
(খ) পরিকল্পনার মাধ্যমে সমাজ থেকে দারিদ্র ও বৈষম্য দূর করা যায়। মানুষের জীবন যাত্রার মান উন্নীত করণের লক্ষ্যে স্বাধীনোত্তর ভারতবর্ষে (ক) দারিদ্র দূরীকরণ (খ) জাতীয় আয় এবং মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি করা (গ) অর্থনৈতিক বৈষম্য দূরীকরণ (ঘ) দ্রুত উদ্যোগীকরণ (ঙ) বেকার সমস্যা দূরীকরণ (চ) খাদ্য ও শিল্পজাত কাঁচামালে স্বাবলম্বী হওয়া ইত্যাদির উপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছিল। এই উদ্দেশ্য সমূহ অর্জন করার লক্ষ্যে স্বাধীনোত্তর ভারতবর্ষে অর্থনৈতিক পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। ভারত সরকার পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা রূপায়ন করে কৃষি খন্ডের উন্নয়ন, দ্রুত শিল্পায়ন ইত্যাদি ক্ষেত্রে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে। এভাবে পরিকল্পনা ভারতের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
➡ ভারতের পরিকল্পনার অর্থ সংগ্রহের তিনটি মুখ্য উৎসঃ (ক) কর সংগ্রহ (খ) বাণিজ্যিক রাজস্ব ও (গ) ঋণ সংগ্রহ।
➡ সরকারি বাজেটকে দুটি ভাগে ভাগ করা হয়। যথা- (ক) পরিকল্পিত বাজেট ও (খ) পরিকল্পনা বহির্ভূত বাজেট।
➡ পরিকল্পনা বাজেটঃ পরিকল্পনায় অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে কোন নির্দিষ্ট সময়ে পরিকল্পিত লক্ষ্য অর্জনের জন্য যে বাজেট নির্ধারণ করা হয় তাকে পরিকল্পনা বাজেট বলা হয়।
➡ অপরিকল্পিত বাজেটঃ অপরিকল্পিত বাজেট বলতে এমন একটি বাজেটকে বোঝায় যা বার্ষিক ভিত্তিতে কাজের নির্দিষ্ট ধারা অনুযায়ী খরচ করা হয়।
➡ বিকেন্দ্রীভূত পরিকল্পনাঃ ১৯৮৬ সাল হতে ভারতে আঞ্চলিক ভিত্তিতে পরিকল্পনার ব্যবস্থা করা হয়। এটাকে বিকেন্দ্রীভূত পরিকল্পনা বলা হয়। বিকেন্দ্রীভূত পরিকল্পনার বৈশিষ্ট্যসমূহ নিম্নরূপঃ
(ক) আঞ্চলিক/মহাকুমা ভিত্তিতে পরিকল্পনার বিকেন্দ্রীকরণ।
(খ) আঞ্চলিক সম্পদের উপযুক্ত বন্টন ব্যবস্থার মাধ্যমে আঞ্চলিক বৈষম্য দূরীকরণ।
(গ) রাজ্যের প্রতিটি অঞ্চলের সমস্যা সমূহ এবং জনসাধারণের অভাব অভিযোগ সমূহের উপর গুরুত্ব প্রদান এবং এর সমাধানকল্পে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ।
(ঘ) আর্থ-সামাজিক উন্নয়নমূলক কর্মসূচিতে জনসাধারণকে অংশগ্রহণ করার সুযোগ-সুবিধা প্রদান।
(ঙ) রাজ্যের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করা।
➡ বিকেন্দ্রীভূত পরিকল্পনার সুবিধা হলো- সমাজে প্রত্যেক শ্রেণীর জনগণের কাছে পরিকল্পনার সুফল পৌঁছে দেওয়া। ভারতের মতো একটি বিশাল দেশ বিকেন্দ্রীভূত পরিকল্পনা অত্যন্ত প্রয়োজন।
➡ বিকেন্দ্রীভূত পরিকল্পনার অসুবিধা হলো- অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সভ্য-সমর্থকদের পরিকল্পনাভুক্ত করে প্রকৃত হিতাধিকারীদেরকে বঞ্চিত রাখা হয়। যার ফলে আর্থিক পরিকল্পনা সুফল হয়না।
➡ বিকেন্দ্রিত পরিকল্পনার একটি উদাহরণ হোল- কেরালা মডেল।
➡ কেরালা মডেলঃ কেরালা মডেল বলতে কেরালা রাজ্যের বার্ষিক পরিকল্পনাকে বোঝায়, যা ঐ রাজ্য কর্তৃক প্রস্তুত করা হয়।
➡ কেরালা মডেল শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ভূমি সংস্কার, কার্যকরী খাদ্য বন্টন এবং দারিদ্র দূরীকরণের উপর প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে।
➡ বাজার অর্থনীতির যুগে পরিকল্পনার প্রাসঙ্গিকতাঃ বাজার অর্থনীতি হচ্ছে অর্থনীতির এমন একটি ব্যবস্থা যেখানে বৃহৎ দেশি ও বিদেশি বাণিজ্য গোষ্ঠীর হাতে থাকবে অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রণ ; অর্থাৎ এমন একটি ব্যবস্থা যেখানে ব্যক্তিগত মুনাফা-ই একমাত্র লক্ষ্য। এদিকে অর্থনীতি শব্দটি মানব সমাজের সঙ্গে জড়িত। সুতরাং অর্থনৈতিক উন্নয়ন বলতে আমরা মানব কল্যাণকেই বুঝি। অতএব, যেহেতু বাজার অর্থনীতির একমাত্র লক্ষ্য হল মুনাফা অর্জন করা, তাই মানব কল্যাণের লক্ষ্যে সরকারের আর্থিক পরিকল্পনার গুরুত্ব অপরিসীম।
উদাহরণস্বরূপ- একটি রাষ্ট্র কতটা উন্নতি করেছে তার বিচার করতে হয় সেই রাষ্ট্রের মানব উন্নয়নসূচক পর্যালোচনা থেকে। যেমন- এই রাষ্ট্রের শিক্ষার হার, জনস্বাস্থ্য, মাথাপিছু খাদ্যের যোগান, শিশু ও স্ত্রীর মৃত্যুর হার, জন্মহার, গড় আয়ু ইত্যাদি। ধরে নেয়া যাক জনস্বাস্থ্যের কথা। এক্ষেত্রে ব্যক্তিগত উদ্যোগে যেসব হাসপাতাল কাজ করে যাচ্ছে তাতে শুধুমাত্র উচ্চবিত্ত এবং মধ্যবিত্তরা পরিষেবা গ্রহণের ক্ষমতা রাখেন। অথচ ভারতবর্ষের মতো একটি দেশে বৃহৎ সংখ্যক লোক দরিদ্র সীমার নিচে বসবাস করেন। তারা কেবলমাত্র সরকারি হাসপাতালেই চিকিৎসা পরিষেবা গ্রহণ করতে পারেন। অতএব, বাজার অর্থনীতির যুগে মানবকল্যাণের উদ্দেশ্যে আর্থিক পরিকল্পনা গ্রহণ করা যে জরুরি তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
➡ বিশ্বায়ন ও পরিকল্পনাঃ বিশ্বায়ন প্রক্রিয়ার যেমন কিছু ইতিবাচক প্রভাব আছে, তেমনই কিছু নেতিবাচক প্রভাবও রয়েছে। বিশ্বায়নের ফলে বহুজাতিক সংস্থা অর্থাৎ কোম্পানিসমূহের সারা বিশ্বে এখন বাড়বাড়ন্ত। যার ফলে বিভিন্ন ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ বহুল পরিমাণে হ্রাস পেয়েছে। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বে-সরকারি খন্ডের দাপট পরিলক্ষিত হচ্ছে। অথচ বে-সরকারি খন্ড দ্বারা নিয়ন্ত্রিত মুক্তবাজার অর্থনীতির একমাত্র লক্ষ্য হচ্ছে মুনাফা অর্জন করা। এদিকে অর্থনীতি শব্দটি মানব সমাজের সঙ্গে জড়িত। সুতরাং অর্থনৈতিক উন্নয়ন বলতে আমরা মানব কল্যাণকেই বুঝি। অতএব, যেহেতু বাজার অর্থনীতির একমাত্র লক্ষ্য হল মুনাফা অর্জন করা, তাই মানব কল্যাণের লক্ষ্যে সরকারের আর্থিক পরিকল্পনার গুরুত্ব অপরিসীম। সুতরাং বর্তমান প্রেক্ষাপটে কল্যাণকামী রাষ্ট্রের ধারণাটি প্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েছে।
কিন্তু লক্ষণীয় যে, বিশ্বায়নের ফলে কোন কোন রাষ্ট্রের পরিকল্পনা গ্রহণ ও রূপায়ণ কিছুটা হলেও প্রাসঙ্গিকতা হারিয়েছে। যেমন- বিশ্ব ব্যাংক ও বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার মতো আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহ অধিকাংশ রাষ্ট্রে বিধি-নিয়ম তৈরি করে দেয়। এমন পরিস্থিতিতে কোন রাষ্ট্রের আইন ও সংবিধান বে-সরকারি মতানুসারে পরিবর্তিত হয়। কোন কোন রাষ্ট্রের সরকারকে শ্রমিক স্বার্থ রক্ষাকারী আইন, পরিবেশ সুরক্ষা আইন ইত্যাদি পরিত্যাগে বাধ্য করানো হয়। কোন রাষ্ট্রের পরিকল্পনার ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। অর্থাৎ বিশ্বায়নের যুগে অনেক রাষ্ট্রকে বিশ্ব ব্যাংক, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা মতো আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহ কর্তৃক আরোপিত শর্তাবলীর উপর নির্ভর করতে হয়। ফলে একথা পরিষ্কার যে, বিশ্বায়নের প্রভাব বিভিন্ন রাষ্ট্রের পরিকল্পনা গ্রহণ ও রূপায়ণ কিছুটা হলেও প্রাসঙ্গিকতা হারিয়েছে।
➡ ভারতীয় নীতি প্রণয়নকারী অর্থনীতিতে রাষ্ট্রের ভূমিকার উপর ঝোঁক দিয়ে ভুল করেছিলেন। ভারত ভালোভাবে উন্নতি করতে পারত যদি প্রথম থেকে বেসরকারি ক্ষেত্রকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেওয়া হত।' এই বিবৃতির পক্ষে যুক্তিগুলো হলো নিম্নরূপঃ
(ক) বেসরকারি ক্ষেত্রে কাজের সুযোগ বৃদ্ধি পায় এবং দেশের কর্মপ্রার্থী যুবক-যুবতীদের অর্থ উপার্জনের সুযোগ সৃষ্টি হয় ; তাতে বেকার সমস্যার চাপ কমে।
(খ) বেসরকারি ক্ষেত্র দ্বারা সম্পদ সৃষ্টি হয় এবং বাণিজ্যিক বিকাশের ফলে সরকারের কোষাগারের শ্রীবৃদ্ধি হয় বিভিন্ন কর এবং রাজস্বের মাধ্যমে, যা সরকার বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্প খরচ করতে পারে। তবে একথাও লক্ষণীয় যে,বাজার অর্থনীতি হচ্ছে অর্থনীতির এমন একটি ব্যবস্থা যেখানে বৃহৎ দেশি ও বিদেশি বাণিজ্য গোষ্ঠীর হাতে থাকবে অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রণ ; অর্থাৎ এমন একটি ব্যবস্থা যেখানে ব্যক্তিগত মুনাফা-ই একমাত্র লক্ষ্য। এদিকে অর্থনীতি শব্দটি মানব সমাজের সঙ্গে জড়িত। সুতরাং অর্থনৈতিক উন্নয়ন বলতে আমরা মানব কল্যাণকেই বুঝি। অতএব, যেহেতু বাজার অর্থনীতির একমাত্র লক্ষ্য হল মুনাফা অর্জন করা, তাই মানব কল্যাণের লক্ষ্যে সরকারি খন্ডের গুরুত্বও অস্বীকার করা যায় না।উদাহরণস্বরূপ- একটি রাষ্ট্র কতটা উন্নতি করেছে তার বিচার করতে হয় সেই রাষ্ট্রের মানব উন্নয়নসূচক পর্যালোচনা থেকে। যেমন- এই রাষ্ট্রের শিক্ষার হার, জনস্বাস্থ্য, মাথাপিছু খাদ্যের যোগান, শিশু ও স্ত্রীর মৃত্যুর হার, জন্মহার, গড় আয়ু ইত্যাদি। ধরে নেয়া যাক জনস্বাস্থ্যের কথা। এক্ষেত্রে ব্যক্তিগত উদ্যোগে যেসব হাসপাতাল কাজ করে যাচ্ছে তাতে শুধুমাত্র উচ্চবিত্ত এবং মধ্যবিত্তরা পরিষেবা গ্রহণের ক্ষমতা রাখেন। অথচ ভারতবর্ষের মতো একটি দেশে বৃহৎ সংখ্যক লোক দরিদ্র সীমার নিচে বসবাস করেন। তারা কেবলমাত্র সরকারি হাসপাতালেই চিকিৎসা পরিষেবা গ্রহণ করতে পারেন।
➡ পরিকল্পনা, সমবায় কৃষি খামার ও আত্মনির্ভরশীলতা ইত্যাদি ধারণা ভারতের বিকাশ নীতির প্রারম্ভিক সময়ের অংশ ছিল। [উদারীকরণ ভারতের বিকাশ নীতির প্রারম্ভিক সময়ের অংশ ছিল না ]
প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা
➡ ১৯৫১ সালে প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা আরম্ভ হয়েছিল।
➡ প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার সময়কালঃ ১৯৫১-৫২ অর্থ বছর থেকে ১৯৫৫-৫৬ অর্থ বছর পর্যন্ত।
➡ ভারতে প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার খসড়া প্রস্তুত করার সঙ্গে জড়িত একজন অর্থনীতিবিদের নাম- কে.এন. রাজ।
➡ কে.এন. রাজ এই যুক্তি দেখিয়ে ছিলেন যে, "ভারতের উন্নয়ন প্রথম দুই দশকে ধীরগতিতে হওয়া প্রয়োজন, কেননা দ্রুতগতিতে উন্নতি গণতন্ত্রকে বিপন্ন করতে পারে"।
➡ প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা প্রধানত কৃষি কৃষি বিভাগ ও তার সঙ্গে বাঁধ এবং তার সঙ্গে সেচের জন্যও মূলধন লগ্নি করে।
➡ প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় সন্নিবিষ্ট একটি বৃহৎ মাত্রার প্রকল্পের নামঃ ভাখরা-নাঙ্গাল প্রকল্প।
➡ ভারতে প্রথম পঞ্চ বার্ষিকী পরিকল্পনা ১৯৫১ সাল থেকে ১৯৫৬ সাল পর্যন্ত কার্যকর ছিল। এটি স্বাধীন ভারতের প্রথম সংগঠিত অর্থনৈতিক উন্নয়ন পরিকল্পনা হিসেবে বিবেচিত। এই পরিকল্পনার মূল উদ্দেশ্য ছিল কৃষি খাতের উন্নয়ন, খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি, সেচব্যবস্থা সম্প্রসারণ এবং বিদ্যুৎ উৎপাদনে অগ্রগতি সাধন করা। ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরুর নেতৃত্বে এই পরিকল্পনা গৃহীত হয় এবং পরিকল্পনা কমিশনের তত্ত্বাবধানে তা বাস্তবায়ন করা হয়।
প্রথম পঞ্চ বার্ষিকী পরিকল্পনায় কৃষিক্ষেত্রে অধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়, কারণ ভারতের অর্থনীতি তখন প্রধানত কৃষিনির্ভর ছিল। খাদ্য সংকট মোকাবিলা, কৃষকদের সহায়তা প্রদান, এবং গ্রামীণ অর্থনীতির উন্নয়ন এই পরিকল্পনার মূল লক্ষ্য ছিল। এছাড়াও, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়নেও গুরুত্ব দেওয়া হয়।
এই পরিকল্পনা ভারতের উন্নয়ন প্রক্রিয়ার ভিত্তি স্থাপন করে এবং ভবিষ্যতের পরিকল্পনাগুলোর রূপরেখা নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি দেশের সার্বিক সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের একটি সূচনা হিসেবে বিবেচিত হয়।
দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা (দ্রুত শিল্পায়ন )
➡ দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার সময়কাল- ১৯৫৬-১৯৬১
➡ দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার মূল স্থপতি হলেন- প্রশান্তচন্দ্র মহলানবিশ।
➡ প্রশান্তচন্দ্র মহলানবিশ বলেছিলেন যে, ভারতের বিকাশকে তীব্র করতে হবে।
➡ প্রশান্তচন্দ্র মহলানবিশ ছিলেন ভারতীয় পরিসাংখ্যিক প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা।
➡ দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার মূল উদ্দেশ্য হল- দ্রুত শিল্পায়ন।
➡ দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার দুটি প্রধান উদ্দেশ্যঃ (ক) দ্রুত শিল্পায়ন (খ) কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি করা।
➡ দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার লক্ষ্যে/উদ্দেশ্যঃ (১)জাতীয় আয় বৃদ্ধি করা, (২) জনগণের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন, (৩) প্রাথমিক ও ভারী শিল্পের ওপর গুরুত্ব আরোপ করে দ্রুত শিল্পায়ন করা, (৫) কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি করা, (৬) কুটির শিল্পের বিকাশ ঘটানো।
➡ দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় শিল্পায়ন ও কৃষিঃদ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা (১৯৫৬-১৯৬১) ছিল ভারতের অর্থনৈতিক পরিকল্পনার এক গুরুত্বপূর্ণ পর্ব, যার মূল লক্ষ্য ছিল দ্রুত শিল্পায়ন। প্রথম পরিকল্পনায় কৃষির উপর গুরুত্ব দিলেও দ্বিতীয় পরিকল্পনায় ভারী ও মৌলিক শিল্প গড়ে তোলার উপর সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়। এই পরিকল্পনার খসড়া প্রস্তুত করেন অর্থনীতিবিদ প্রশান্ত চন্দ্র মহলানবিশের নেতৃত্বে একদল বিশেষজ্ঞ। শিল্পায়নের মাধ্যমে দারিদ্র্য দূরীকরণ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং সামরিক শক্তি বৃদ্ধির লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়।
যদিও শিল্প খাতে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়, কৃষি খাতকেও অবহেলা করা হয়নি। খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে সেচ, কৃষি উপকরণ ও প্রযুক্তির উন্নয়নের দিকেও লক্ষ্য রাখা হয়। এই পরিকল্পনাকে ঘিরে বিতর্কও দেখা দেয়—গান্ধীবাদী অর্থনীতিবিদ জে. সি. কুমারাপ্পা গ্রামীণ শিল্পায়নের পক্ষে ছিলেন, চৌধুরী চরণ সিং কৃষি উন্নয়নের পক্ষে, আবার অনেকেই শিল্পায়নের মাধ্যমে জাতীয় আয় বৃদ্ধিকে বেশি কার্যকর মনে করতেন।
সবশেষে, দ্বিতীয় পরিকল্পনার মাধ্যমে ভারতে আধুনিক শিল্প ভিত্তি স্থাপিত হয়, যা ভবিষ্যতের অর্থনৈতিক কাঠামো গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
➡ জে.সি.কুমারাপ্পা ছিলেন একজন অর্থনীতিবিদ যিনি অর্থনৈতিক কার্যক্রমে গান্ধীনীতি প্রয়োগের চেষ্টা করেন।
➡ [প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় কৃষি খন্ডের উন্নয়নের উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছিল।]
➡ প্রথম ও দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার পার্থক্যঃ (ক) প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় কৃষি খন্ডের উন্নয়নের উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছিল। দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার মূল লক্ষ্য ছিল দ্রুত শিল্পায়ন। (খ) প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার খসড়া প্রস্তুত করার সঙ্গে জড়িত অর্থনীতিবিদ কে.এন.রাজ যুক্তি দেখান যে, ভারতের উন্নয়ন প্রথম দুই দশকে ধীরগতিতে হওয়া প্রয়োজন। মহলানবিশের নেতৃত্বে দ্বিতীয় খসড়ার সঙ্গে জড়িত অর্থনীতিবিদগণ সর্বক্ষেত্রে দ্রুত পরিবর্তনের পক্ষপাতী ছিলেন। (গ) প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় দেশের উন্নয়নের চাবিকাঠি হিসেবে ভূমি সংস্কারের উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছিল। দ্বিতীয়
পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় ভারী শিল্প স্থাপন ও সম্প্রসারণের উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছিল।
➡ আধুনিকীকরণ কৃষি ও শিল্পের সঙ্গে জড়িত ছিল।
তৃতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা (১৯৬১-৬৬)
➡ তৃতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার প্রধান উদ্দেশ্য সমূহঃ (ক) বার্ষিক জাতীয় আয় পাঁচ শতাংশের অধিকক বৃদ্ধি করা।
(খ) খাদ্যশস্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে স্বনির্ভরতা অর্জন করা এবং রপ্তানি ও উদ্যোগের প্রয়োজন পূরণার্থে উৎপাদন বৃদ্ধি করা।
(গ) মৌলিক শিল্পের বিস্তার।
(ঘ) জনসম্পদের উপযুক্ত ব্যবহারের মাধ্যমে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি।
(ঙ) আর্থিক বৈষম্য দূরীকরণের মাধ্যমে সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা।
ভূমি সংস্কার
➡ ভারতের স্বাধীনতা লাভের পর সরকার কৃষি জমির ক্ষেত্রে ব্রিটিশ সরকারের গ্রহণ করা ব্যবস্থা সমূহের যে সংস্কার সাধন করা হয়েছিল তাকে ভূমি সংস্কার বলা হয়।
ব্রিটিশ শাসনকালে জমিদারগণ কৃষিভূমির নিয়ন্ত্রণ করত। কিন্তু তারা কৃষিক্ষেত্রে বিশেষ মনোনিবেশ করত না। জমিদারি প্রথার বিলোপ সাধন কৃষিভূমিকে তাদের হাত থেকে মুক্ত করেছিল। তৎসঙ্গে ভূ-পতিগণের রাজনৈতিক শক্তি ও প্রভাব সংকুচিত হয়েছিল। এই সংস্কারের ফলে ভারতবর্ষে কৃষি উন্নয়নের ক্ষেত্রে বৃহৎ সাফল্য অর্জিত হয়েছিল।
ভূমি সংস্কারের মূল লক্ষ্য ছিল নিম্নরূপঃ (ক) বিক্ষিপ্ত হয়ে থাকা ভূমিকে একত্রিত করে উৎপাদন বৃদ্ধি করা। (খ) সিলিং ব্যবস্থা প্রবর্তন করে একজন ব্যক্তির হাতে থাকা ভূমির সর্বোচ্চ পরিমাণ নির্ধারণ করা এবং উদ্বৃত্ত ভূমি সমূহ ভূমিহীনদের মধ্যে বিতরণ করা। (গ) অপরের ভূমিতে ক্ষেত করা কৃষককে নিরাপত্তা প্রদান করা।
উপরোক্ত তিনটি লক্ষ্যের মধ্যে ভূমি সংস্কারের মাধ্যমে প্রথম লক্ষ্যের ক্ষেত্রে কিছু সফলতা অর্জন করা সম্ভব হয়েছিল। কিন্তু অন্য দুটি লক্ষ্যের ক্ষেত্রে চরম ব্যর্থতা পরিলক্ষিত হয়েছিল।
➡ কে কিসের সঙ্গে জড়িত? চরণ সিং (কৃষিজীবীগণ), পি.সি মহলানবিশ (শিল্পায়ন), ভার্গিস কুরিয়েন (দগ্ধ সমবায়গুলি)]
খাদ্য সংকট:
➡ ১৯৬০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে ভারত মারাত্মক খাদ্য সংকটে পড়ে। খারাপ আবহাওয়া, অনাবৃষ্টি ও ফসলের নিম্ন উৎপাদন এর মূল কারণ ছিল। ১৯৬৫ ও ১৯৬৬ সালে পরপর দুটি বছর খরা হয়, যার ফলে খাদ্যশস্য উৎপাদন অনেকটাই কমে যায়। দেশে খাদ্যশস্যের মজুত প্রায় শূন্য হয়ে যায় এবং আমদানির উপর নির্ভর করতে হয়। এই সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্যের উপর ভারতের নির্ভরতা বেড়ে যায়। খাদ্যের ঘাটতির ফলে দেশে দারিদ্র্য ও অপুষ্টি আরও বেড়ে যায়।
প্ল্যান হলিডে:
➡ ভারতের পরিকল্পনা কমিশন ১৯৬৬ থেকে ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত একটি ‘প্ল্যান হলিডে’ ঘোষণা করে। এর অর্থ ছিল, নিয়মিত পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার পরিবর্তে এই তিন বছর ‘বার্ষিক পরিকল্পনা’ রূপে পরিচালিত হয়। কারণ হিসেবে বলা যায়—
(ক) খাদ্য সংকট ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার অভাব,
(খ) তৃতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার লক্ষ্য পূরণ না হওয়া,
(গ) যুদ্ধে বিপুল অর্থব্যয় (ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ, ১৯৬৫),
(ঘ) বৈদেশিক সাহায্য ও রফতানির ওপর নির্ভরতা বৃদ্ধি।
এই সময় অর্থনৈতিক নীতিতে কিছু পরিবর্তন আনা হয়। কৃষিক্ষেত্রে আধুনিক পদ্ধতি চালু করা হয় এবং ‘সবুজ বিপ্লব’-এর মাধ্যমে খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোর চেষ্টা শুরু হয়।
সবুজ বিপ্লব ও শ্বেত বিপ্লব
➡ সবুজ বিপ্লবঃ ১৯৬০-এর দশকে ভারতে কৃষিখন্ডে আধুনিক প্রযুক্তি, উন্নত বীজ ও সার প্রয়োগের ফলে কৃষি উৎপাদন ব্যাপক বৃদ্ধি পায়। অতি অল্প সময়ে কৃষিখন্ডে বৈপ্লবিক পরিবর্তনের জন্য একে সবুজ বিপ্লব বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
➡ সবুজ বিপ্লবের সূচনাঃ ১৯৬০-এর দশকে ভারতে কৃষির হাল খারাপ থেকে খারাপতর হয়। এ সময় দেশে খাদ্য সংকট দেখা দেয়। এই সমস্যা সমাধানের জন্য তৃতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা হতে এক নতুন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। তখন ভারতের বিভিন্ন জেলাকে নিবিড় কৃষি জেলা প্রকল্পের আওতায় আনা হয়। আধুনিক প্রযুক্তি, উন্নত বীজ, সার, কীটনাশক ঔষধ ইত্যাদি ব্যবহার করে কৃষির উৎপাদন বৃদ্ধি করা হলে সবুজ বিপ্লবের সূচনা হয়।
➡ সবুজ বিপ্লবের বিষয়ে আলোচনাঃ ১৯৬০-এর দশকে ভারতে কৃষির হাল খারাপ থেকে খারাপতর হয়। এ সময় দেশে খাদ্য সংকট দেখা দেয়। এই সমস্যা
উত্তরণের জন্য সবুজ বিপ্লবের সূচনা হয়। কৃষিকার্যে নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার, উন্নত মানের বীজ ও সার প্রয়োগ, পর্যাপ্ত জলসেচের সুযোগ-সুবিধা, ইত্যাদি এই বিপ্লবের প্রধান কারণ ছিল।
➡ সবুজ বিপ্লবের ইতিবাচক ফলাফল নিম্নরূপঃ
(ক) উৎপাদন বৃদ্ধি - সবুজ বিপ্লবের ফলে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। ফলে দেশ খাদ্যশস্য স্বনির্ভর হয়ে ওঠে।
(খ) কর্মসংস্থান বৃদ্ধি - সবুজ বিপ্লবের সময় নতুন প্রযুক্তির ব্যবহারের ফলে দেশে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পায়।
➡ বিপ্লবের কিছু নেতিবাচক ফলাফলও রয়েছে। যেমন- (ক) বৃহৎ চাষের সুবিধাঃ কৃষিক্ষেত্রে নতুন প্রযুক্তির সুবিধা কেবলমাত্র বৃহৎ চাষীরা অধিক পরিমাণে ভোগ করেছে। নতুন প্রযুক্তি অধিক ব্যয়সাধ্য বলে ছোট ছোট চাষীরা এর সুবিধা গ্রহণ করতে পারেনি। (খ) আঞ্চলিক বৈষম্য বৃদ্ধিঃ সবুজ বিপ্লবের প্রথম পর্যায়ে পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তর প্রদেশ, প্রভৃতি গম উৎপাদক এলাকাগুলি অধিক উন্নত হয়। অন্যান্য এলাকায় উৎপাদন বৃদ্ধি না পাওয়ার ফলে আঞ্চলিক বৈষম্য বৃদ্ধি পায়।
বিদ্যমান খাদ্য সংকটের ফলে ভারত বিদেশি চাপের কাছে অসুরক্ষিত ও খাদ্য খয়রাতের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়লে তা থেকে উত্তরণের উপায় হিসাবে সবুজ বিপ্লবের ইতিবাচক ফলাফল পরিলক্ষিত হয়। অপর দিকে সবুজ বিপ্লবের ফলে আঞ্চলিক বৈষম্য দেখা দিলে তা নিয়ে অনেক সমালোচনাও হয়।
➡ সবুজ বিপ্লবের দুটি কারণ- (ক) কৃষিকার্যে নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার। (খ) উন্নত মানের বীজ ও সার প্রয়োগ।
➡ সবুজ বিপ্লবের দুটি ফলাফল- (ক) কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি। (খ) গ্রামীণ বিকাশ ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধি।
➡ এম. এস. স্বামীনাথনকে ভারতে সবুজ বিপ্লবের নায়ক বলে সম্মান করা হয়।
➡ শ্বেত বা দুগ্ধ বিপ্লবঃ ১৯৭০-এর দশকে শুরু করা 'অপারেশন ফ্লাড' নামক প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে দুগ্ধ ও দুগ্ধজাত দ্রব্যের উৎপাদন ব্যাপক বৃদ্ধি পায়। একে শ্বেত বিপ্লব বা দুগ্ধ বিপ্লব বলা হয়।
ভার্গিস কুরিয়েন ভারতে শ্বেত বিপ্লব বা দুগ্ধ বিপ্লবের মূল কারিগর। তাকে 'ভারতের দুগ্ধমানব' বলা হয়।তিনি দুগ্ধজাত দ্রব্যের উৎপাদন বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে গ্রামীণ শিল্পকে আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে আধুনিক শিল্পের রূপ দেন। তিনি গুজরাটের আনন্দ শহরকে কেন্দ্র করে 'ডেয়ারি' (দুগ্ধ) সমবায় আন্দোলন গড়ে তোলেন। ১৯৫৫ সালে “আনন্দ মিল্ক ইউনিয়ন লিমিটেড” নামক ব্র্যান্ড তৈরি করে ভার্গিস দুগ্ধ উৎপাদনের ক্ষেত্রে এক যুগান্তকারী বিপ্লবের সূচনা করেন। ১৯৭০-এর দশকে 'অপারেশন ফ্লাড' কর্মসূচি রূপায়ন করেন গ্রামীণ দুগ্ধ উৎপাদকদেরকে সংগঠিত করা হয়। ১৯৭৩ সালে গড়ে উঠল গুজরাট কোঅপারেটিভ মিল্ক মার্কেটিং ফেডারেশন। এভাবে 'আনন্দ' শহরের চৌহদ্দি ছাড়িয়ে গুজরাট তথা সারা ভারতে ‘আমুল' হয়ে উঠল মুখে স্বাদ জোগানো এক অদ্বিতীয় ব্র্যান্ড, ‘দ্য টেস্ট অফ ইন্ডিয়া!’ এই দুগ্ধ শিল্প গ্রামীণ উন্নয়ন ও দারিদ্র্য দূরীকরণের একটি অনুপম আদর্শ হয়ে উঠল। এটাকে নাম দেওয়া হল শ্বেত বিপ্লব দুগ্ধ বিপ্লব।
➡ ভার্গিস কুরিয়েনকে 'ভারতের দুগ্ধমানব' (দুধওয়ালা) বলা হয়।
➡ AMUL-এর সম্পূর্ণ রূপ- Anand Milk Union Limited
➡ সবুজ বিপ্লব ও শ্বেত বিপ্লবের পার্থক্যঃ
(ক) সবুজ বিপ্লবের মূল লক্ষ্য হল খাদ্যদ্রব্যের উৎপাদন বৃদ্ধি করা। অন্যদিকে শ্বেত বিপ্লবের মূল লক্ষ্য হল দুগ্ধ উৎপাদন বৃদ্ধি করা।
(খ) সবুজ বিপ্লবের সঙ্গে নর্মান বর্লাউগ-এর অবদান জড়িত। কিন্তু শ্বেত বিপ্লবের সঙ্গে ভার্গিস কুরিয়েনের অবদান জড়িত।
(গ) সবুজ বিপ্লব দ্বারা পাঞ্জাব, হরিয়ানা, প্রভৃতি রাজ্য উপকৃত হয়েছিল। অপরদিকে শ্বেত বিপ্লব বিশেষত গুজরাটে আরম্ভ হয়েছিল।
(ঘ) সবুজ বিপ্লব সমবায় ভিত্তিক কৃষির উপর বিশেষভাবে গুরুত্ব প্রদান
করেছিল। অন্যদিকে শ্বেত বিপ্লব সমতাভিত্তিক দুগ্ধ উৎপাদনের উপর গুরুত্ব প্রদান করেছিল।