ভারতীয় জন সংঘ
➡ ভারতীয় জন সংঘ ১৯৫১ সালে গঠিত হয়। শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন।
➡ ১৯৮০ সালে ভারতীয় জনতা পার্টি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল।
➡ ভারতীয় জনতা পার্টির মূল পার্টি হল ভারতীয় জন সংঘ।
➡ ভারতীয় জন সংঘের নীতি ও আদর্শঃ ভারতীয় জনসংঘের নীতি ও আদর্শ নিম্নরূপ:
(ক) অখণ্ড ভারত: দলটি অখণ্ড ভারতের ধারণায় বিশ্বাসী, যেখানে ভৌগোলিক ও সাংস্কৃতিক ঐক্যের উপর জোর দেওয়া হয়।
(খ) এক দেশ, এক সংস্কৃতি: জনসংঘ ভারতীয় সংস্কৃতির একীকরণের উপর গুরুত্ব দেয়, যা তাদের মতে জাতীয় ঐক্যের ভিত্তি।
(গ) সংস্কৃতি ও আধুনিকতার সমন্বয়: দলটি বিশ্বাস করে যে ভারতীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের ভিত্তিতে দেশ আধুনিক, প্রগতিশীল এবং শক্তিশালী হতে পারে।
(ঘ) হিন্দি সরকারি ভাষা: জনসংঘ হিন্দিকে ভারতের সরকারি ভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠার পক্ষে ছিল, যা জাতীয় ঐক্যের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত।
(ঙ) আণবিক অস্ত্রের সমর্থন: দলটি জাতীয় নিরাপত্তার জন্য ভারতের আণবিক অস্ত্র তৈরির পক্ষে সোচ্চার ছিল।
(চ) সংখ্যালঘু সুবিধা বিরোধিতা: জনসংঘ ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক সংখ্যালঘুদের জন্য বিশেষ সুবিধার বিরোধিতা করে, সমান নাগরিকত্বের নীতির উপর জোর দিয়েছে।
➡ [নোটঃ ভারতীয় জন সংঘ ১৯৫২ সালের নির্বাচনে তিনটি আসন এবং ১৯৫৭ সালের নির্বাচনে চারটি আসন লাভ করে।]
➡ ভারতীয় জন সংঘ ও কমিউনিস্ট পার্টির আদর্শগত পার্থক্যঃ
(ক) ব্যক্তিবাদ বনাম সমাজবাদ: জনসংঘ জাতীয়তাবাদ ও ব্যক্তিগত উদ্যোগে বিশ্বাসী; কমিউনিস্ট পার্টি সমাজবাদ ও শ্রেণীহীন সমাজের পক্ষে।
(খ) রাষ্ট্রায়ত্তকরণ: জনসংঘ শিল্পের রাষ্ট্রায়ত্তকরণের বিরোধী, বেসরকারি উদ্যোগ সমর্থন করে; কমিউনিস্ট পার্টি রাষ্ট্রায়ত্তকরণের পক্ষে।
(গ) সংস্কৃতি বনাম সাম্যবাদ: জনসংঘ ভারতীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের ভিত্তিতে উন্নয়নে বিশ্বাসী; কমিউনিস্ট পার্টি সাম্যবাদী সমাজ গঠনে জোর দেয়।
(ঘ) সংখ্যালঘু অধিকার: জনসংঘ সংখ্যালঘুদের বিশেষ সুবিধার বিরোধী; কমিউনিস্ট পার্টি শ্রেণী-সংগ্রামের উপর গুরুত্ব দিয়ে সংখ্যালঘু অধিকার সমর্থন করে।
➡ RSS-এর সম্পূর্ণ নাম হল "রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ"। এটি ১৯২৫ সালে ড. কেশব বলিরাম হেডগেওয়ার দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
➡ দীনদয়াল উপাধ্যায় ছিলেন রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সংঘের সক্রিয় সদস্য ও ভারতীয় জন সংঘের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য।
সমাজতান্ত্রিক দল
➡ কংগ্রেসের সমাজতান্ত্রিক দল ১৯৩৪ সালে গঠন করা হয়েছিল।
➡ ১৯৩৪ সালে কংগ্রেসের মধ্যে একদল যুবনেতা কংগ্রেস সমাজবাদী দল গঠন করেন। ১৯৪৮ সালে কংগ্রেস দলে দ্বিদলীয় সভ্যপদ গ্রহণ করা প্রতিহত হলে সমাজবাদীগণ এ বছরই পৃথক সমাজতান্ত্রিক দল গঠন করেন। আচার্য নরেন্দ্রদেব সমাজবাদী পার্টির সভাপতি ছিলেন।
সমাজতান্ত্রিকরা গণতান্ত্রিক সমাজবাদের আদর্শে বিশ্বাসী ছিলেন যা তাদেরকে কংগ্রেস ও সাম্যবাদী দল থেকে পৃথক করতো। পুঁজিবাদী ও জমিদার শ্রেণীকে সমর্থন ও শ্রমিক ও কৃষকদের অবহেলা করার জন্য সমাজবাদীগণ কংগ্রেসের সমালোচনা করতো। ১৯৫৫ সালে কংগ্রেস সমাজতান্ত্রিক ধাঁচে সমাজ গঠন করাকে দলের আদর্শ হিসাবে ঘোষণা করলে সমাজতান্ত্রিকরা বিপাকে পড়ে। এরপর দলটি নানা কারণে কালক্রমে ভেঙ্গে বেশ কয়েকটি সমাজবাদী দলে পরিণত হয়। এগুলোর মধ্যে অন্যতম হল- কিষান মজদুর প্রজা পার্টি, প্রজা সোস্যালিস্ট পার্টি ও সংযুক্ত সোস্যালিস্ট পার্টি।
➡ ১৯৪৮ সালে পৃথক সমাজতান্ত্রিক দল গঠন করা হয়েছিল।
➡ পুঁজিবাদী ও জমিদার শ্রেণীকে সমর্থন ও শ্রমিক ও কৃষকদের অবহেলা করার জন্য সমাজবাদীগণ কংগ্রেসের সমালোচনা করেছিল।
➡ সোস্যালিস্ট পার্টি (সমাজবাদী পার্টি)-র দুজন নেতার নাম হল- জয়প্রকাশ নারায়ণ এবং আচার্য নরেন্দ্র দেব।
➡ সমাজবাদী পার্টি ও কমিউনিস্ট পার্টির মধ্যে তিনটি পার্থক্য নিম্নরূপঃ
(ক) পন্থা: সমাজবাদীরা শান্তিপূর্ণ, সাংবিধানিক উপায়ে গণতান্ত্রিক সমাজবাদ প্রতিষ্ঠায় বিশ্বাসী, যেখানে কমিউনিস্টরা সাধারণত সশস্ত্র বিপ্লবের মাধ্যমে সমাজ পরিবর্তনের পক্ষপাতী।
(খ) মালিকানা: কমিউনিজমে ব্যক্তিগত সম্পত্তির কোনো স্থান নেই, সমস্ত সম্পদ সমষ্টিগত মালিকানাধীন। কিন্তু সমাজতন্ত্রে গণমালিকানার পাশাপাশি সীমিত ব্যক্তিগত সম্পত্তির অধিকার থাকতে পারে।
(গ) শ্রেণী ব্যবধান: কমিউনিজমে শ্রেণীহীন সমাজের লক্ষ্য থাকে, যেখানে শ্রেণী ব্যবধানের অস্তিত্ব থাকে না। সমাজতন্ত্রে শ্রেণী ব্যবধান কমানোর চেষ্টা থাকলেও, সীমিত শ্রেণী পার্থক্য থাকতে পারে।
➡[ বর্তমানে ভারতের অনেক দল যেমন সমাজবাদী পার্টি, রাষ্ট্রীয় জনতা দল, জনতা দল (ইউনাইটেড) এবং জনতা দল (সেক্যুলার) তাদের উৎপত্তি সমাজতান্ত্রিক দল থেকে অনুসরণ করে।]
অন্যান্য রাজনৈতিক দলসমূহ
➡ রাষ্ট্রীয় বিপ্লবী দল একটি স্পেনীয় রাজনৈতিক দল।১৯২৯ সালে এটি প্রতিষ্ঠিত হয় ন্যাশনাল রিভলিউশনারি পার্টি (PRI) নামে। এই দলের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন প্লুটার্কো ইলিয়াস কালেস। দলটি মেস্কিকোতে সফলভাবে বিপ্লবের প্রতিনিধিত্ব করতে সক্ষম হয়েছিল এবং প্রায় ছয় দশক শাসন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত ছিল। এই দলের শাসনকে 'পরিপূর্ণ স্বৈরতন্ত্র' বলে বর্ণনা করা হয়েছে। ২০০০ সালে দলটি রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে পরাজিত হয়।
➡ পি.আর.আই. (PRI)-এর প্রতিস্থাপক ছিলেন প্লুটার্কো ইলিয়াস কালেস।
➡ ভারতে কংগ্রেস দলের প্রাধান্য মেক্সিকোর PRI দলের প্রাধান্যের থেকে পৃথক। কারণ, ভারতে অনেক দলই মুক্ত ও নিরপেক্ষ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে। তবু কংগ্রেস দল নির্বাচনে জয় লাভ করে আধিপত্য দেখিয়েছে। পক্ষান্তরে মেক্সিকো এমন একটি রাষ্ট্র যেখানে PRI দল দীর্ঘকাল ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত ছিল। কিন্তু সেখানে শাসক দলকে অধিকতর বিশ্বাসযোগ্যতা দেওয়ার জন্য নামেমাত্র অন্য দলগুলি ছিল। তাছাড়া ম্যাক্সিকোতে নির্বাচনী আইনগুলি এমনভাবে প্রয়োগ করা হতো যাতে PRI সব সময় জয় লাভ করত পারে। অথচ সেখানে নির্বাচনে শাসক দল কর্তৃক কারচুপি ও কৌশল করা হতো। পক্ষান্তরে ভারতের নির্বাচন ব্যবস্থা ছিল অবাধ এবং নিরপেক্ষ।
➡ ড˙ বি আর আম্বেদকর ভারতীয় ইন্ডিপেন্ডেন্ট লেবার পার্টির প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন।
➡ ড˙ বি আর আম্বেদকর ১৯৫৬ সালে বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন।
➡ ড˙ বি আর আম্বেদকর একজন পন্ডিত ও বুদ্ধিজীবী ছিলেন। তিনি ইন্ডিপেন্ডেন্ট লেবার পার্টি প্রতিষ্ঠা করেন এবং পরবর্তীতে সিডিউলড্ কাস্ট ফেডারেশন প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি ভারতের সংবিধানের খসড়া কমিটির সভাপতি ছিলেন ও স্বাধীনতার পরে নেহেরুর প্রথম কেবিনেটে মন্ত্রী হন। কিন্তু হিন্দু রোড বিলের ব্যাপারে মতপার্থক্যের দরুন ১৯৫১ সালে তিনি পদত্যাগ করেন। ১৯৫৬ সালে কয়েক হাজার অনুগামী সহ তিনি বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ করেন।
বিরোধী দল
➡ ভারতে বিরোধী দলগুলি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তারা সরকারের নীতি ও কার্যক্রমের সমালোচনা করে, জনস্বার্থবিরোধী বিষয়গুলি জনসমক্ষে তুলে ধরে এবং কখনো কখনো সরকারকে সহায়তা করে। যদিও প্রথমদিকে তারা লোকসভা ও রাজ্যসভায় প্রতীকী প্রতিনিধিত্ব পেয়েছিল, তাদের উপস্থিতি গণতন্ত্রের ভারসাম্য রক্ষায় সহায়ক ছিল। বিরোধী নেতারা যুক্তি-তর্কের মাধ্যমে সরকারকে প্রভাবিত করেছেন। তবে, বিরোধী দলগুলির মধ্যে ঐক্যের অভাব, অসংগঠিত কাঠামো এবং অভ্যন্তরীণ সংঘাত তাদের কার্যকারিতা হ্রাস করেছে। ফলে, তারা প্রায়শই সরকারের বিরুদ্ধে একত্রিতভাবে শক্তিশালী বিরোধিতা গড়ে তুলতে ব্যর্থ হয়েছে।
