View All Notes
NOTICE

Tuesday, May 27, 2025

একদলীয় আধিপত্যের যুগ (২)

 ভারতীয় দলীয় ব্যবস্থা

➡ ব্রিটিশ শাসনকালে ভারতে দলীয় ব্যবস্থা গঠিত হয়েছিল।

➡ ভারতীয় দলীয় ব্যবস্থার অন্যতম চারটি বৈশিষ্ট্য বা প্রকৃতি হলো-

(ক) বহুদলীয় ব্যবস্থা।

(খ) সাম্প্রদায়িক দলের উপস্থিতি।

(গ) আঞ্চলিকতার ভিত্তিতে দল গঠন।

(ঘ) ব্যক্তি প্রাধান্যতা।

➡ ভারতের দুটি রাষ্ট্রীয় দলের নাম ও প্রতীকঃ

(ক) ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস- প্রতীক (হাত)

(খ) ভারতীয় জনতা পার্টি - প্রতীক (পদ্মফুল)

➡ ভারতীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় মোর্চা যুগের সৃষ্টি হওয়ার অন্যতম চারটি কারণ হলো-

(ক) ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের আধিপত্যের অবসান।

(খ) আঞ্চলিক দলের উত্থান।

(গ) কংগ্রেসের প্রতি মানুষের অনীহা প্রকাশ।

(ঘ) সাম্প্রদায়িক মেরুকরণ।

➡ স্বাধীনতার পূর্বে গঠিত চারটি রাজনৈতিক দলঃ (ক) ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস (খ) ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টি (গ) সমাজবাদী দল (ঘ) মুসলিম লীগ।



ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস


➡ ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস দলটি এশিয়ার মধ্যে সর্বাপেক্ষা প্রাচীন দল ।

➡ ১৮৮৫ সালে অ্যালান অক্টোভিয়ান হিউমের প্রেরণায় ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস দল গঠিত হয়েছিল ।৭২ জন রাজনীতিবিদের উপস্থিতিতে ভারতের বোম্বাই শহরে দলের প্রথম অধিবেশ অনুষ্ঠিত হয়।  উমেশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের প্রথম সভাপতি।

➡ কংগ্রেস দলের দুটি আদর্শ হল—(ক) গণতান্ত্রিক সমাজবাদ ও (খ) ধর্মনিরপেক্ষতা।

➡ ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য‌- বৈদেশিক শাসনের বিরুদ্ধে অভাব-অভিযোগ জানাবার জন্য ভারতীয় কংগ্রেস দলের প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন এই দলের নেতৃত্বে পরিচালিত হয়েছিল। স্বাধীনতার পর ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস যে আদর্শ ও নীতির কথা ঘোষণা করেছিল তাতে এই দলের নিম্নোক্ত লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য সমূহ প্রতিফলিত হয়। যথা-


(ক) গণতান্ত্রিক সমাজবাদ- ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস সমাজতান্ত্রিক ধাঁচে রাষ্ট্র গঠনের আদর্শ প্রচার করে। এ মর্মে ১৯৭১ সালে সমবিধান সংশোধনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক সমাজবাদ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করা হয়।


(খ) ধর্ম নিরপেক্ষতা- সাম্প্রদায়িকতা ও ধর্মান্ধতা দূরীকরণ করা কংগ্রেসের অন্যতম লক্ষ্য হিসাবে স্বীকৃত হয়। দলটি ধর্ম নিরপেক্ষতার আদর্শে বিশ্বাসী।


(গ) জোট নিরপেক্ষতা- আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে জোট নিরপেক্ষ নীতি গ্রহণ করা ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের অন্যতম লক্ষ্য।


(ঘ) সার্বিক বিকাশ- দারিদ্র দূরীকরণ, বেকার সমস্যা সমাধান করা সহ মানুষের সার্বিক বিকাশের জন্য কংগ্রেস দল গুরুত্ব আরোপ করে।

➡ কংগ্রেস দল একটি রামধনু সদৃশ সামাজিক কোয়ালিশন হিসাবে ভিন্নতার প্রতীক ছিল। ১৮৮৫ সালে জন্ম লাভ করা এই দলটি ভারতীয় দলীয় ব্যবস্থার উৎপত্তি ও বিকাশের প্রধান উৎস।  ভারতের অধিকাংশ বিরোধী দলের আবির্ভাব ঘটেছে  এই দলের ভাঙন অথবা দল ত্যাগের ফলে । 

➡ কংগ্রেস দলের আদর্শবাদী প্রবণতা ছিল লক্ষণীয়। কৃষক ও শিল্পপতি, শহরবাসী ও গ্রামবাসী, শ্রমিক ও মালিক, নিম্ন, মধ্য ও উচ্চশ্রেণী ও বর্ণ সমূহ পরস্পর বিরোধী শ্রেণী কংগ্রেসে স্থান পেয়েছিল। এদের অনেকেই কংগ্রেসে বিলীন হয়ে গিয়েছিল। অবশিষ্ট কতিপয় গোষ্ঠী নিজেদের অস্তত্ব বহাল রেখে কংগ্রেসের সঙ্গেই ছিল। ১৯৪৮ সালে কংগ্রেসের নিজস্ব সংবিধান সংশোধন করার আগ পর্যন্ত এই দলে দ্বি-দলীয় সভ্য পদ গ্রহণের সুযোগ ছিল। এভাবে কংগ্রেস একটি সামাজিক ও আদর্শগত সম্মেলন ছিল।

➡ কংগ্রেস সমাজবাদী দল ১৯৩৪ সালে গঠন করা হয়েছিল। কংগ্রেস দলের মধ্যে একদল যুবনেতা, যারা কংগ্রেসের অধিক গতিশীল হওয়ার পক্ষপাতী ছিল তারাই কংগ্রেস সমাজবাদী দল গঠন করেছিল।

➡ ১৯৩৪ সালে কংগ্রেসের সমাজবাদী চিন্তাধারা গ্রহণ করা লোকদের দ্বারা কংগ্রেস সমাজবাদী দল গঠন করা হলে দলটি প্রত্যাহ্বানের মুখোমুখি হয়। সুতরাং ভবিষ্যতে এ ধরণের দলীয় বিভাজন রুখতে কংগ্রেস দল ১৯৪৮ সালে নিজস্ব সংবিধান সংশোধন করে একই সঙ্গে দুটি দলে আসীন থাকতে বারণ করে।

➡ ১৯৪৮ সালে কংগ্রেস নিজস্ব সংবিধান সংশোধন করেছিল । এই সংশোধনের ফলে কংগ্রেসে দ্বি-দলীয় সভ্য পদ গ্রহণ করা প্রতিহত হয়েছিল।

➡ ১৯৪৮ সালে সমাজতন্ত্রীগণ কংগ্রেস ত্যাগ করে পৃথক দল গঠন করে। 

➡ পালমের কংগ্রেসকে ছত্র সংগঠন বলেছিলেন।



ভারতীয় কমিউনিস্ট দল/ সাম্যবাদী দল


➡ ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টিঃ রাশিয়ার বলশেভিক বিপ্লব থেকে প্রেরণা নিয়ে ১৯২০ -এর প্রথম দিকে ভারতে কমিউনিস্ট (সাম্যবাদী) গোষ্ঠীর আবির্ভাব হয়। ১৯২৫ সালে এই দলটি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়। ভারতে সোভিয়েত ব্যবস্থার অনুরূপ শ্রেণীহীন ও শোষণ মুক্ত সমাজ গঠন করা সাম্যবাদী গোষ্ঠীর উদ্দেশ্য। দেশে জমিদারি প্রথার উচ্ছেদ সাধন, শিল্পের জাতীয়করণ, ভাষা ভিত্তিক রাজ্য গঠন, অনুন্নত শ্রেণীর উন্নয়ন ও উদ্বাস্তদের বিনা ব্যয়ে পুনর্বাসন ইত্যাদি হচ্ছে এই গোষ্ঠীর কার্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত।


১৯৩৫ সাল থেকে কমিউনিস্টরা প্রধানত ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের আওতার ভিতর থেকে কাজ করতে থাকে। ডিসেম্বর ১৯৪১ সালে ছাড়াছাড়ি হয়ে যায় ; যখন কমিউনিস্টরা নাজী জার্মানির বিরুদ্ধে ব্রিটিশদেরকে সমর্থনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। স্বাধীনতার অনতি পরে কমিউনিস্টরা প্রকাশ্যভাবে হিংসাত্মক বিপ্লবকে সমর্থন করে ও তেলেঙ্গানা অঞ্চলে সহিংস আন্দোলনে উস্কানি দেয়। ১৯৫১ সালে তারা হিংসার পথ পরিহার করে। ১৯৫২ সালে দেশের প্রথম সাধারণ নির্বাচনে তারা কংগ্রেসের বিরোধিতা করে। এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে কমিউনিস্ট পার্টি দ্বিতীয় বৃহৎ সংখ্যক (১৬ টি লোক সভা) আসন লাভ করে। ১৯৫৭ সালে কেরালা বিধান সভা নির্বাচনে কমিউনিস্ট পার্টি সর্বাধিক আসন জয়লাভ করে সরকার গঠন করে।


সোভিয়েত ইউনিয়ন ও চীনের মধ্যে আদর্শগত সংঘাতের ফল স্বরূপ ১৯৬৪ সালে ভারতীয় কমিউনিস্ট দলে ভাঙন দেখা দেয়। সোভিয়েত পন্থী অংশ সি পি আই নামেই থাকে, বাকী অংশ সি পি আই (এম) বা মার্ক্সবাদী কমিউনিস্ট দল সংগঠন করে। আজ পর্যন্ত উভয় দলই বজায় রয়েছে।

➡ বলশেভিক বিপ্লব সোভিয়েত রাশিয়ায় হয়েছিল।

➡  ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি ১৯২৫ সালে কানপুরে প্রতিষ্ঠিত হয়। মুখ্য নেতারা ছিলেন: এম এন রায়, এস এ ডাঙ্গে, সিঙ্গারাভেলু চেট্টিয়ার, মুজফফর আহমেদ, শৌকত উসমানি প্রমুখ। পরবর্তীকালে পি সি যোশি এবং এ কে গোপালন দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতা হিসেবে আবির্ভূত হন।

➡ ১৯৬৪ সালে ভাতীয় কমিউনিস্ট পার্টির ভাঙন হয়।

➡  ভারতে মার্ক্সবাদী কমিউনিস্ট পার্টি ১৯৬৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়।

➡ মার্ক্সবাদী দল চীন বা অন্য কোন দেশকে অন্ধভাবে অনুসরণ করা উচিত বলে মনে করে না। সংসদীয় পদ্ধতিকে সাময়িক ভাবে তারা স্বীকার করে এবং যতদিন না দেশে বিপ্লবের ক্ষেত্র প্রস্তুত হয় ততদিন সংসদীয় ব্যবস্থাকে জনগণের সংগ্রামের হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করাই মার্ক্সবাদী দলের লক্ষ্য।

➡ বামপন্থী দলসমূহের নীতি ও কার্যসূচিঃ ভারতে শ্রেণীহীন ও শোষণ মুক্ত সমাজ গঠন করা বামপন্থী দল সমূহের উদ্দেশ্য। রাশিয়ার বলশেভিক বিপ্লব থেকে প্রেরণা নিয়ে ১৯২০ -এর প্রথম দিকে এই দলের আবির্ভাব হয়। ভারতে বামপন্থী দলসমূহের কতগুলো নীতি নিম্নরূপ-

(ক) বামপন্থীরা শ্রমিক ও কৃষকদেরকে সংগঠিত করে সরকারের শ্রমিক ও কৃষক স্বার্থ-বিরোধী নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগঠিত করে।

(খ) বামপন্থী দলসমূহ পুঁজিপতিগণের শোষণ নীতির বিরুদ্ধে সরব হয়ে থাকেন।

(গ) বামপন্থী দলসমূহ সমতার আদর্শ প্রতিষ্ঠা করার দাবি উত্থাপন করে।

দেশে জমিদারি প্রথার উচ্ছেদ সাধন, শিল্পের জাতীয়করণ, ভাষা ভিত্তিক রাজ্য গঠন, অনুন্নত শ্রেণীর উন্নয়ন ও উদ্বাস্তদের বিনা ব্যয়ে পুনর্বাসন ইত্যাদি হচ্ছে বামপন্থী দলসমূহের কার্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত।

➡ ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের উপর সাম্যবাদী গোষ্ঠীর ধারণাঃ  ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে কমিউনিস্ট পার্টি অফ ইন্ডিয়া (সিপিআই)-এর ভূমিকা ছিল উল্লেখযোগ্য কিন্তু বিতর্কিত। সিপিআই-এর শক্তিশালী সংগঠন ও নিবেদিত কর্মীবৃন্দ থাকলেও, তারা ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে "বুলেটের বিরুদ্ধে বুলেট" নীতি গ্রহণ করে, যার ফলে ব্রিটিশরা তাদের নিষিদ্ধ ঘোষণা করে এবং অনেককে গ্রেফতার বা মৃত্যুদণ্ড দেয়। স্বাধীনতার প্রকৃতি নিয়ে সিপিআই-এর মধ্যে দ্বিধা ছিল; তারা ১৯৪৭-এর ক্ষমতা হস্তান্তরকে প্রকৃত স্বাধীনতা নয়, বরং প্রতারণা হিসেবে দেখত। ফলে, স্বাধীনতার পর তারা তেলেঙ্গানায় সহিংস বিপ্লবের পথ বেছে নেয়। কিন্তু ১৯৫১ সালে দলটি হিংসাত্মক পথ ত্যাগ করে ভারতের মূলধারার রাজনীতিতে যোগ দেয়।

 ➡ কেরালায় কমিউনিস্ট পার্টির জয়‌ঃ ১৯৫৭ সালের মার্চে কেরালার বিধানসভা নির্বাচনে কমিউনিস্ট পার্টি অফ ইন্ডিয়া (সিপিআই) ১২৬টি আসনের মধ্যে ৬০টিতে জয়লাভ করে এবং পাঁচজন নির্দলের সমর্থনে সরকার গঠন করে। রাজ্যপাল ই এম এস নাম্বুদ্রিপাদকে মন্ত্রিসভা গঠনের আমন্ত্রণ জানান। এটি ছিল বিশ্বে প্রথম গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত কমিউনিস্ট সরকার। কিন্তু ১৯৫৯ সালে কংগ্রেস দলের "মুক্তি সংগ্রাম" আন্দোলনের পর কেন্দ্রের কংগ্রেস সরকার সংবিধানের ৩৫৬ ধারা প্রয়োগ করে কেরালার কমিউনিস্ট সরকারকে বরখাস্ত করে।

➡ ১৯৫৭ সালে কেরালার দ্বিতীয় বিধানসভা নির্বাচনে ভারতীয় কমিউনিস্ট দল সরকার গঠন করেছিল।

➡ ১৯৫৭ সালে কেরালায় কমিউনিস্টরা সরকার গঠন করলে পৃথিবীতে প্রথমবারের মত একটি কমিউনিস্ট দলীয় সরকার গণতান্ত্রিক নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসে।

➡ ১৯৫৯ সালে কেন্দ্রের কংগ্রেস সরকার সংবিধানের ৩৫৬ ধারা অনুযায়ী কেরালার কমিউনিস্ট সরকারকে বরখাস্ত করে।




 


 





 


 

Post Top Ad

Pages

SoraTemplates

Best Free and Premium Blogger Templates Provider.

Buy This Template