View All Notes
NOTICE

Tuesday, May 27, 2025

একদলীয় আধিপত্যের যুগ (১)


একদলীয় আধিপত্যের যুগ 

➡ ১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর ভারতের সংবিধান প্রস্তুত ও স্বাক্ষর করা হয় । ২৬ জানুয়ারি ১৯৫০ সালে এটা কার্যকরী করা হয় ।

➡ সংবিধানের খসড়া সমিতির সভাপতি ছিলেন ভীমরাও আম্বেদকর।

➡ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নেতৃবৃন্দ ভারতে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা সফল হবে না বলে সংশয় পোষণ করেছিলেন। এর কারণ হলো - (ক) ভারত আয়তনে একটি বিশাল ও জনবহুল দেশ । (খ) ভারতের জনসংখ্যার বেশির ভাগ লোক অশিক্ষিত ও দরিদ্র ছিলেন। (গ) নতুন জাতির সামনে বিভিন্ন প্রতিকূলতা ও প্রতিবন্ধকতা ছিল।


নির্বাচন

➡ ভারতের মত একটি দেশে মুক্ত ও স্বচ্ছ নির্বাচন অনুষ্ঠিত করবার জন্য মূল প্রয়োজনীয়তাসমূহঃ

(ক) স্বাধীন ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োগ দ্বারা নির্বাচন পরিচালনা করা।

(খ) নির্বাচনী আদর্শ আচরণবিধি মান্য করা।

(গ) জনগণের সচেতনতা।

➡ ১৯৫০ সালের জানুয়ারি মাসে নির্বাচন আয়োগ গঠন করা হয়েছিল। প্রথম মুখ্য নির্বাচন আধিকারিক ছিলেন সুকুমার সেন।

➡ নির্বাচন আয়োগের চারটি কার্য- (ক) ভোটার তালিকা প্রস্তুত করা । (খ) নির্বাচন পরিচালনার জন্য আধিকারিক ও কার্মচারী নিযুক্তি ও প্রশিক্ষণ দেওয়া। (গ) নির্বাচনের দিন স্থির করে ভোটদান পরিচালনা করা। (ঘ) ভোট গণনা ও ফলাফল ঘোষণা করা।

➡ নির্বাচন আয়োগ দ্বারা প্রকাশিত প্রথম খসড়া ভোটার তালিকার মধ্যে ৪০ লক্ষ মহিলাদের নাম বাদ পড়েছিল। এই কারণে তালিকাটি নাকচ করা হয়েছিল।

➡ প্রথম সাধারণ নির্বাচনের আগে ভারতে সর্বজনীন ভোটাধিকারের প্রবর্তন ঝুঁকিপূর্ণ বলে ধারণা করা হয়েছিল। কারণ, (ক) তখন পর্যন্ত ইউরোপের দেশগুলিতে মহিলাদের ভোটাধিকার দেওয়া হয়নি। কিন্তু ভারতে মহিলাদের ভোটাধিকার প্রদান করে ভোটার তালিকা প্রস্তুত করত সার্বজনীন ভোটাধিকার দেওয়া হয়েছিল। (খ) ভারতের জনসংখ্যার বেশির ভাগ লোক অশিক্ষিত ও দরিদ্র ছিলেন। ১৭.৬ কোটি ভোটারের মধ্যে মাত্র ১৫ শতাংশ শিক্ষিত ছিলেন।(গ) তাছাড়া নতুন জাতির সামনে বিভিন্ন প্রতিকূলতা ও প্রতিবন্ধকতা ছিল।


এই পরিপ্রেক্ষিতে ভারতে সার্বজনীন ভোটাধিকার খুব সাহসি ও ঝুঁকিপূর্ণ পদক্ষেপ ছিল।

➡ ভারতের একটি পত্রিকার সম্পাদক প্রথম সাধারণ নির্বাচনকে ইতিহাসের সর্ববৃহৎ জুয়া খেলা বলে অভিহিত করেছিলেন। কারণ, প্রথমত ভোটার তালিকায় মহিলাদের নাম সন্নিবিষ্ট করা হয়েছিল। অথচ ইউরোপের দেশগুলোতে তখনও মহিলাদের ভোটাধিকার দেওয়া হয়নি। দ্বিতীয়ত, ভোটার তালিকায় সন্নিবিষ্ট ১৭.৬ কোটি ভোটের মাত্র ১৫ শতাংশ শিক্ষিত ছিলেন। তাই ভারতে সার্বজনীন ভোটাধিকারের মাধ্যমে গণতান্ত্র প্রতিষ্ঠা করা সফল হবে না বলে অনেকেই সমালোচনা করেছিলেন। এই দৃষ্টিকোণ থেকে ভারতের একটি পত্রিকার সম্পাদক প্রথম সাধারণ নির্বাচনকে ইতিহাসের সর্ববৃহৎ জুয়া খেলা বলে অভিহিত করেছিলেন।


প্রথম সাধারণ নির্বাচন

➡ ১৯৫১ সালের অক্টোবর ও ১৯৫২ সালের জানুয়ারি মাসের মধ্যে ভারতে প্রথম সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। [কিন্তু এই নির্বাচনকে ১৯৫২ সালের নির্বাচন বলা হয়। কারণ, দেশের বেশিরভাগ অঞ্চলে ১৯৫২ সালের জানুয়ারি মাসে এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল।]

➡ প্রথম সাধারণ নির্বাচনে লোকসভা ও বিধান সভা একসঙ্গে হয়েছিল।

➡ ভারতে প্রথম সাধারণ নির্বাচনে লোকসভার আসন সংখ্যা ছিল ৪৮৯ এবং সারা দেশে ৩২০০ টি বিধানসভা আসন ছিল।

➡ ১৯৫২ সালের সাধারণ নির্বাচন ব্যবস্থাঃ (ক) ভোটার তালিকা- নির্বাচন আয়োগ দ্বারা প্রথমে মোট ১৭ কোটি ভোটারের নাম সন্নিবিষ্ট করে একটি তালিকা প্রস্তুত করা হয়। এর মধ্যে শতকরা ১৫ জন স্বাক্ষর ছিলেন। (খ) কর্মচারী নিয়োগ- নির্বাচন আয়োগ ৩ লক্ষের অধিক আধিকারিক ও কর্মচারী প্রশিক্ষণ দিয়ে নিয়োগ করেছিল। (গ) ভোটদান পদ্ধতি- প্রথম সাধারণ নির্বাচনে স্থির করা হয়েছিল যে, নির্বাচন কেন্দ্রের ভিতরে প্রত্যেক প্রার্থীর নির্বাচনী প্রতীক যুক্ত বক্স থাকবে। ভোটদাতাকে একটি ফাঁকা বেলেট পেপার দেওয়া হত। সেটা তিনি যে প্রার্থীকে ভোট দেবেন তার বক্সে ফেলে দিতেন। এভাবে প্রথম সারারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল।

➡ ভারতে ভোটদানের পদ্ধতি পরিবর্তনঃ- প্রথম সাধারণ নির্বাচনে ভোটদান পদ্ধতি এভাবে ছিল যে, নির্বাচন কেন্দ্রের ভিতরে প্রত্যেক প্রার্থীর নির্বাচনী প্রতীক যুক্ত বক্স থাকত। ভোটদাতাকে একটি ফাঁকা ব্যালেট পেপার দেওয়া হত। সেটা তিনি যে প্রার্থীকে ভোট দেবেন তার বক্সে ফেলে দিতেন। এই পদ্ধতিতে প্রথম দু'টি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তারপর ব্যালেট পেপারে প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীর নাম ও প্রতীক চিহ্ন সন্নিবিষ্ট করা হয়। তখন ভোটারকে তিনি যে প্রার্থীকে ভোট দিতে চান তার নামের পাশের প্রতীক চিহ্নে চাপ দিতে হয়। অতঃপর ১৯৯০ সালের শেষ দিকে নির্বাচন কমিশন EVM-এর ব্যবহার শুরু করে। ২০০৪ সাল থেকে সারা দেশে EVM-এর মাধ্যমে ভোট গ্রহণ করা হয়।

➡ EVM-এর সম্পূর্ণ নাম- Electronic Voting Machine (বৈদ্যুতিন ভোট যন্ত্র)।

➡ ব্যালেট পত্রে প্রার্থীর নাম ও প্রতীক চিহ্ন সন্নিবিষ্ট করা হয়েছিল।

➡ ১৯৯৮ সালে নির্বাচন আয়োগ বৈদ্যুতিন ভোট যন্ত্র ব্যবহার আরম্ভ করেছিল।

➡ ২০০৪ সাল থেকে নির্বাচন আয়োগ সারা দেশে EVM-এর মাধ্যমে ভোট গ্রহণ আরম্ভ করে।

➡ প্রথম সাধারণ নির্বাচনে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন পন্ডিত জওহরলাল নেহেরু।

➡ প্রথম সাধারণ নির্বাচনে মোট ৫৩ টি রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করেছিল। তন্মধ্যে দুটি দলের নাম হল- (ক) ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস এবং (খ) ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টি।

➡ প্রথম সাধারণ নির্বাচনে ৬ টি জাতীয় দল ও ৪৭ টি রাজ্যিক দল ছিল।

➡ ১৯৫২ সালে অনুষ্ঠিত প্রথম সাধারণ নির্বাচনে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস ৪৮৯ টি আসনের মধ্যে ৩৬৪ টি আসন লাভ করেছিল।

➡ ১৯৫২ সালে অনুষ্ঠিত প্রথম সাধারণ নির্বাচনে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস মোট ৭৫ শতাংশ আসন এবং ৪৫ শতাংশ ভোট লাভ করেছিল।

➡ ১৯৫২ সালে অনুষ্ঠিত প্রথম সাধারণ নির্বাচনে দ্বিতীয় বৃহত্তম সংখ্যক আসন লাভ করা দলটির নাম- ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টি।

➡ প্রথম সাধারণ নির্বাচনে ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টি ১৬ টি আসন লাভ করেছিল।

➡ ১৯৫৭ সালে কেরালায় কমিউনিস্ট দল সরকার গঠন করেছিল।

➡ ১৯৫২ থেকে ১৯৬৭ সালের নির্বাচনের মধ্যে কিছু দিনের জন্য কংগ্রেস ক্ষমতায় না থাকা দুটি রাজ্যের নাম- কেরালা ও মাদ্রাজ।

➡ দ্বিতীয় সাধারণ নির্বাচন ১৯৫৭ সালে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এই নির্বাচনে লোকসভার আসন সংখ্যা ছিল ৪৯৪।

➡ তৃতীয় সাধারণ নির্বাচন ১৯৬২ সালে অনুষ্ঠিত হয়েছিল । এই নির্বাচনে লোকসভার আসন সংখ্যা ছিল ৪৯৪।


এক দলীয় আধিপত্যঃ 

➡ আধিপত্যকারী দলীয় ব্যবস্থা (এক দলীয় আধিপত্য) বলতে এমন এক পরিস্থিতি বোঝায় যেখানে বহু রাজনৈতিক দল নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে, কিন্তু প্রায় প্রতিটি নির্বাচনে একটি মাত্র দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে।

➡ একদলীয় আধিপত্যের উদাহরণঃ ভারত হচ্ছে একদলীয় আধিপত্যের উদাহরণ। 

➡ একদলীয় আধিপত্যের যুগ আরম্ভ হয় ১৯৫২ সাল থেকে এবং সমাপ্ত হওয় ১৯৬৭ সালে।

 ➡ একদলীয় প্রাধান্যের যুগ বলতে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস দলের কথা বুঝানো হয়।

➡ ভারতে একদলীয় ব্যবস্থার চারটি কারণ হলঃ (ক) শক্তিশালী রাজনৈতিক দলের অনুপস্থিতির ফলে একদলীয় প্রাধান্য দেখা দেয়। (খ) কংগ্রেসই তখন একমাত্র দল ছিল যার সারা দেশজুড়ে সংগঠন ছিল। (গ) ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের জনপ্রিয়তা ছিল অনেক বেশি। (ঘ) এক দলীয় আধিপত্যের যুগে ভারতে আঞ্চলিকতাবাদ শক্তিশালী ছিল না।

➡ কংগ্রেসের আধিপত্য/আধিপত্যের প্রকৃতি: ১৯৫২ থেকে ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত ভারতীয় রাজনীতিতে কংগ্রেস দলের আধিপত্যের যুগ ছিল। ১৯৫২ সালের প্রথম সাধারণ নির্বাচনে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস লোকসভার ৪৮৯টি আসনের মধ্যে ৩৬৪টি জয় করে অভূতপূর্ব প্রাধান্য প্রতিষ্ঠা করে। রাজ্য বিধানসভাগুলোতেও কংগ্রেসের আধিপত্য ছিল। ১৯৫৭ ও ১৯৬২ সালের দ্বিতীয় ও তৃতীয় নির্বাচনেও দলটি এই প্রভাব অক্ষুণ্ণ রাখে। দেশব্যাপী সুসংগঠিত কাঠামো, স্বাধীনতা সংগ্রামের জনপ্রিয়তা, শক্তিশালী বিরোধী দলের অভাব এবং দুর্বল আঞ্চলিকতাবাদ কংগ্রেসের এই আধিপত্যের মূল কারণ। 

রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে কংগ্রেস দলের এই আধিপত্যের প্রকৃতি ছিল বহুদলীয় ব্যবস্থার মধ্যে এক দলের প্রাধান্য। মূলত ভারতে বহু দলীয় ব্যবস্থার প্রচলন রয়েছে। চীন, কিউবা বা মায়ানমারের মতো একদলীয় রাষ্ট্রের বিপরীতে, ভারতে মুক্ত ও নিরপেক্ষ নির্বাচনে একাধিক দল অংশ নিলেও প্রথম তিনটি সাধারণ নির্বাচনে কংগ্রেস নির্বাচনী জয়ের মাধ্যমে আধিপত্য বজায় রাখে। এটি ভারতের রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে বিশ্বের অন্যান্য একদলীয় ব্যবস্থা থেকে স্বতন্ত্র করে তুলেছে। 

➡ একদলীয় রাষ্ট্রের উদাহরণ হল— মায়ানমার , বেলারুশ, ইজিপ্ট, ইত্যাদি।

➡ চীন ও কিউবা হল এমন দুটি দেশ যেখানে সংবিধান কেবল একটি দলকে অনুমতি প্রদান করে।

➡ শক্তিশালী রাজনৈতিক দলের অনুপস্থিতির ফলে একদলীয় প্রাধান্য দৃঢ়মূল হয়।

➡ দুর্বল জনমত একদলীয় প্রাধান্যতার দেখা দেওয়ার কারণ নয়।

➡ একদলীয় প্রাধান্যতা দেশের অতীতের ঔপনিবেশিকতার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত নয় ।

➡ একদলীয় প্রাধান্য দেশে গণতান্ত্রিক আদর্শের অনুপস্থিতি প্রতিফলিত করে।

➡ একদলীয় আধিপত্যের অবস্থান ও ভারতীয় রাজনীতির গণতান্ত্রিক প্রকৃতিঃ এক দলীয় আধিপত্যের অবস্থান ভারতীয় রাজনীতির গণতান্ত্রিক প্রকৃতিকে প্রভাবিত করেছিল। প্রথমত, একদলীয় আধিপত্য দেশে গণতান্ত্রিক আদর্শের অনুপস্থিতি প্রমাণ করেছিল। বাস্তবেও তা ছিল। তখন বিরোধী দলগুলো সরকারী নীতি সমালোচনা করলেও লোক সভায় বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য শাসক দল এতে কর্ণপাত করেনি। দ্বিতীয়ত, একদলীয় প্রাধান্যের ফলে দেশে শক্তিশালী বিরোধী দলের অভাব দেখা দিয়েছিল। অথচ শক্তিশালী বিরোধী দল ছাড়া গণতন্ত্র সফল হতে পারে না।

➡ ১৯৫২-১৯৬৭ সময়কালে দিল্লি, পাঞ্জাব, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান ইত্যাদি রাজ্যে কংগ্রেসই বরাবর ক্ষমতায় ছিল।




Post Top Ad

Pages

SoraTemplates

Best Free and Premium Blogger Templates Provider.

Buy This Template