View All Notes
NOTICE

Saturday, May 24, 2025

জাতি গঠনের প্রত্যাহ্বান : ০১

জাতি গঠনের প্রত্যাহ্বান সমূহ: স্বাধীন ভারতের চ্যালেঞ্জ

জাতি গঠনের প্রত্যাহ্বান সমূহ

ভারতের স্বাধীনতা ও প্রাথমিক প্রতিকূলতা

→ ভারতবর্ষ অত্যন্ত প্রতিকূলাতার মধ্য দিয়ে জন্মলাভ করেছিল। কারণ- (ক) ভারতবর্ষ এমন একটি রাষ্ট্র যেখানে বিভিন্ন ভাষা, ধর্ম ও সংস্কৃতি বিরাজমান। এই বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্য সাধন করে একটি রাষ্ট্রের কাঠামো গড়ে তুলা অনেক কঠিন বলে ধারণা করা হয়েছিল। (খ) স্বাধীনতার প্রাক মুহূর্তে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চল নিয়ে পাকিস্থান আলাদা রাষ্ট্র গঠনের দাবি প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছিল। (গ) লর্ড মাউন্টব্যাটেন ভারতকে বিভাজন করে ক্ষমতা হস্তান্তরের ঘোষণা দিলে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি অস্থির হয়ে উঠেছিল। এমন পরিস্থিতিতে ভারতের স্বাধীনতার পথ মসৃণ ছিল না।

→ ১৯৪৭ সালের ১৪-১৫ আগস্ট মধ্য রাতে ভারত স্বাধীন হয়েছিল।

পন্ডিত জওহরলাল নেহেরুর ভূমিকা

→ পন্ডিত জওহরলাল নেহেরু স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী ছিলেন।

→ ১৯৪৭ সালের ১৪-১৫ আগস্ট মধ্য রাতে গণপরিষদের বিশেষ অধিবেশনকে সম্বোধন করে পন্ডিত জওহরলাল নেহেরু যে বক্তব্য দিয়েছিলেন সেই বক্তৃতাকে ভবিতব্যের সঙ্গে অভিসার বক্তৃতা বলা হয়।

→ পন্ডিত জওহরলাল নেহেরু ১৮৮৯ সালে এলাহাবাদে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। ১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীনতা অর্জন করলে তিনি স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হন। তিনি ১৯৯৬৪ সালের ২৭ মে পর্যন্ত ভারতের প্রধানমন্ত্রী পদে ছিলেন। ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পন্ডিত জওহরলাল নেহেরুর লক্ষ্য ছিল একটি জাতি গঠন করা, দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা এবং সর্বস্তরের জনসাধারণের উন্নয়ন সুনিশ্চিত করা।

→ পন্ডিত জওহরলাল নেহেরুর লক্ষ্য ছিল- (ক) জাতি গঠন করা। (খ) দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা। (গ) সর্বস্তরের জনসাধারণের উন্নয়ন সুনিশ্চিত করা।

জাতি গঠনের উপাদান

→ জাতি গঠনের চারটি উপাদান হল- (ক) জাতিগত ঐক্য। (খ) জনসাধারণের সাধারণ বাসস্থান। (গ) দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা। (ঘ) দেশের অর্থনৈতিক বিকাশ সাধন করা।

→ জাতি গঠনের দু'টি সহায়ক উপাদান- (ক) শিক্ষার বিস্তার (খ) গণ মাধ্যম।

সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের অবদান

→ সর্দার বল্লভ ভাই প্যাটেল ছিলেন স্বাধীন ভারতের প্রথম উপ-প্রধানমন্ত্রী/ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী / গৃহ মন্ত্রী। তিনি ১৮৭৫ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন অগ্রণী সৈনিক ছিলেন। দেশের সংবিধান রচনায় তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। দেশীয় রাজ্য সমূহকে ভারতীয় গণতন্ত্রে অন্তর্ভুক্ত করার ক্ষেত্রে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

মহাত্মা গান্ধীর হত্যা

→ ১৯৪৮ সালের ৩০ জানুয়ারি নাথুরাম গডসে মহাত্মা গান্ধীকে হত্যা করেছিল।

→ গান্ধীজির কার্যপ্রণালী সকলের পছন্দ না হওয়ার কারণসমূহঃ- (ক) গান্ধীজি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠার উপর জোর দিয়েছিলেন; যার জন্য উগ্র সাম্প্রদায়িক শক্তি সমূহ তাঁর বিরুদ্ধে ছিল। (খ) তাছাড়া যারা ভারতকে হিন্দুরাষ্ট্র গঠনের চেষ্টা করেছিলেন গান্ধীজি তাদের সমর্থক ছিলেন না। ফলে তারা গান্ধীজির কার্য প্রণালী সহজ ভাবে মেনে নিতে পারেন নি।

তিনটি প্রধান প্রত্যাহ্বান

➡ ভারতবর্ষ ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতা অর্জনের পরপরই তিনটি প্রত্যাহ্বানের সম্মুখীন হয়। এগুলো হলো- (ক) জাতীয় ঐক্য ও সংহতি প্রতিষ্ঠা করা। (খ) দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা। (গ) আর্থিক বিকাশ সাধন করা।

জাতীয় ঐক্য ও সংহতি স্থাপন

জাতীয় ঐক্য ও সংহতি স্থাপন: ভারত এক বিশাল দেশ, যেখানে বিভিন্ন জাতি, ভাষা, ধর্ম ও সংস্কৃতির সমন্বয়ে এক বৈচিত্র্যময় সমাজ বিরাজমান। স্বাধীনতার পর এই বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য স্থাপন এবং দেশের অখণ্ডতা রক্ষা করা ছিল একটি বৃহৎ প্রত্যাহ্বান। দেশভাগের তিক্ত অভিজ্ঞতা, সাম্প্রদায়িক সংঘাত এবং দেশীয় রাজ্যগুলোর একীকরণের জটিলতা এই কাজকে আরও দুরূহ করে তুলেছিল।

গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা

গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা।: ভারতীয় সংবিধান দেশকে একটি সার্বভৌম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। তবে, বহুত্ববাদী সমাজে প্রত্যেক নাগরিকের মৌলিক অধিকার, যেমন স্বাধীনতা, সমতা ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা এবং সামাজিক-অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে গণতান্ত্রিক আদর্শ বাস্তবায়ন ছিল এক জটিল দায়িত্ব। অশিক্ষা ও সামাজিক বৈষম্যের মধ্যেও গণতন্ত্রের ভিত্তি মজবুত করা ছিল অপরিহার্য।

আর্থিক বিকাশ সাধন করা

আর্থিক বিকাশ সাধন করা: স্বাধীনতার সময় ভারতের অর্থনীতি ছিল কৃষিনির্ভর এবং দারিদ্র্য ছিল ব্যাপক। জনসাধারণের জীবনমান উন্নয়ন, দারিদ্র্য দূরীকরণ এবং শিল্পায়নের মাধ্যমে সমবিকাশ ও সমান উন্নয়নের ধারা গড়ে তোলা ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ।

➡ স্বাধীন ভারতকে গ্রহণ করতে হয়েছিল এরূপ প্রথম প্রত্যাহ্বানটি হলো- জাতীয় ঐক্য ও সংহতি প্রতিষ্ঠা করা।

জাতি গঠন

➡ জাতি গঠন হলো একটি রাষ্ট্রের জনগণকে একটি সাধারণ পরিচয় ও লক্ষ্যের অধীনে ঐক্যবদ্ধ করার প্রক্রিয়া। জাতি গঠনের প্রধান উপাদানগুলো হলো: জনসংখ্যা, নির্দিষ্ট অঞ্চল, সরকার এবং সার্বভৌমত্ব।

➡ ভারতের ভাষা সমস্যার চারটি বৈশিষ্ট্য হল- (ক) ভাষার ভিত্তিতে রাজ্য গঠন। (খ) ভাষার ভিত্তিতে আঞ্চলিকতাবাদের উত্থান। (গ) বিভিন্ন অঞ্চলে বসবাসকারী জনসাধারণের মধ্যে মতানৈক্য সৃষ্টি। (ঘ) ভাষার ভিত্তিতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সৃষ্টি।

ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের ধারণা

➡ ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্রের ধারণা ও জাতীয় নেতৃবৃন্দঃ- ধর্মের ভিত্তিতে দেশ স্বাধীন হলেও ভারতবর্ষে বিভিন্ন ধর্মের লোক বসবাস করেন। এমন একটি দেশে জাতীয় ঐক্য এবং সংহতি প্রতিষ্ঠা করা সহ গণতন্ত্রকে সফল করার জন্য ধর্ম নিরপেক্ষতার নীতি অবলম্বন করা প্রয়োজন। তাছাড়া দেশের সকল শ্রেণীর মানুষের উন্নয় সুনিশ্চিত করে একটি প্রগতিশীল রাষ্ট্রের কাঠামো গড়ে তোলার জন্য ধর্ম এবং রাজনীতির পৃথকীকরণ জরুরী বলে ধারণা করা হয়েছিল।

সুতরাং ভারতে সাংবিধানিক গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করার পাশাপাশি সামাজিক ও আর্থিক বিকাশের ধারাকে ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে আমাদের জাতীয় নেতৃবৃন্দ ধমনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের ধারণা পোষণ করেছিলেন।

➡ "আমাদের একটি মুসলিম সম্প্রদায় আছে.....।" স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী পন্ডিত জওহরলাল নেহেরু ১৯৪৭ সালের ১৫ অক্টোবর দেশের মুখ্যমন্ত্রীদের উদ্দেশ্যে লেখা চিঠিতে এ-কথা বলেছিলেন।

➡ নেহেরু ভারতকে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলার জন্য যে যুক্তি দেখিয়েছিলেন তা হলো- (ক) ধর্মের ভিত্তিতে দেশ স্বাধীন হলেও ভারতবর্ষে বিভিন্ন ধর্মের লোক বসবাস করেন। এমন একটি দেশে ঐক্যবদ্ধ জাতি গঠন করে গণতন্ত্রকে সফল করার জন্য ধর্ম নিরপেক্ষতার নীতি অবলম্বন করার প্রয়োজনীয়তা তিনি উপলব্ধি করেন।

(খ) নেহেরুর মতে, দেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে সুরক্ষা এবং গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের অধিকারাবলী দিতে অক্ষম হলে এখানে একটি ক্ষত থাকবে, যা শেষপর্যন্ত সমস্ত রাষ্ট্র দেহকে বিষাক্ত করবে এবং সম্ভবত তাকে ধ্বংস করবে।

(গ) গণতন্ত্রকে সফল করার জন্য ধর্ম এবং রাজনীতির পৃথকীকরণ প্রয়োজন বলে তিনি ধারণা করেন।

(ঘ) দেশে সাংবিধানিক গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করার পাশাপাশি সামাজিক ও আর্থিক বিকাশের ধারাকে ত্বরান্বিত করার জন্য তিনি ধর্ম নিরপেক্ষ নীতির পোষকতা করেন।

➡ পন্ডিত জওহরলাল নেহেরু ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের যে ধারণা পোষণ করেছিলেন তা কেবল আবেগপ্রবণ ছিল না, এতে বিজ্ঞতা ও দূরদর্শীতাও ছিল। কারণ, ধর্মনিরপেক্ষ নীতি গ্রহণের জন্য ভারতীয় গণতন্ত্র সফল হয়েছে। এই নীতির জন্য ভারত আজ পৃথিবীর অন্যতম এক বলিষ্ঠ রাষ্ট্র হিসাবে গড়ে উঠতে সক্ষম হয়েছে। এটাকে নেহেরু নীতির ইতিবাচক দিক বলে গণ্য করা যায়।

➡ নেহেরু নীতির দু'টি নেতিবাচক দিক হলো- (ক) নেহেরু নীতির উপর দেশের সকল জনসাধারণ একমত হতে পারেননি। (খ) তাঁর নীতি সমূহ ত্রুটিপূর্ণ ছিল বলে অনেকেই সমালোচনা করেছেন।

➡ পন্ডিত নেহেরু এমন কোন প্রতীক সৃষ্টি করতে পারেন নি যার চারদিকে ভারতীয় জনগণ একত্রিত হতে পারে।

জাতীয় সংহতির বৈশিষ্ট্য

➡ ভারতকে জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার বৈশিষ্ট্যসমূহ/ জাতীয় সংহতি সম্বন্ধীয় চারটি বৈশিষ্ট্যঃ

➡ ভারতকে জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার বৈশিষ্ট্যসমূহ/ জাতীয় সংহতি সম্বন্ধীয় চারটি বৈশিষ্ট্যঃ

(ক) প্রাকৃতিক ঐক্য:- ভারত প্রাকৃতিক বৈচিত্রে পরিপূর্ণ। এই বৈচিত্রের মধ্যেও প্রাকৃতিক ঐক্য গড়ে উঠেছে।

(খ) ধর্মীয় ঐক্য:- ভারত বিভিন্ন ধর্মের উৎপত্তি স্থল। এখানে হিন্দু, মুসলিম, খৃষ্টান, বৌদ্ধ, জৈন ইত্যাদি ধর্মের লোক বাস করেন। তা সত্ত্বেও এখানে জাতীয় ঐক্য এবং সংহতি দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

(গ) ভাষাগত ঐক্য:- ভাষার ক্ষেত্রেও ভারত একটি বৈচিত্র্যপূর্ণ দেশ। এখানে সকল ভাষাভাষী লোক নিজেদেরকে ভারতীয় বলে গর্ব বোধ করেন।

(ঘ) সাংস্কৃতিক ঐক্য:- ভারত বিভিন্ন জাতি, উপজাতি, জনজাতি, ধর্ম, ভাষা প্রভৃতির মিলন ভূমি। সকল শ্রেত্ররণীর লোকের রয়েছে আলাদা আলাদা সংস্কৃতি। তবে এসব্দের মধ্যে ভারতীয় সভ্যতা-সংস্কৃতির একটা মৌলিক দিক লক্ষ্য করা যায়। যা ভারতীয় জাতীয় ঐক্য এবং সংহতির রক্ষায় সহায়ক বটে।

➡ সংহতি স্থাপনের জন্য সরকারের বিবেচনাধীন তিনটি বিষয়ঃ (ক) বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্য ও সংহতি স্থাপন করা- ভারত নানা জাতি, ধর্ম ও ভাষাভাষী মানুষের দেশ। এই বৈচিত্রপূর্ণ দেশের ঐক্য এবং সংহতি রক্ষা করা সরকারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনাধীন বিষয়।

(খ) প্রাকৃতিক ঐক্য- ভারত প্রাকৃতিক বৈচিত্রে পরিপূর্ণ একটি দেশ। দেশের অখন্ডতা রক্ষা করা সরকারের বিবেচনাধীন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

(গ) ভাষিক ও সাংস্কৃতিক ঐক্য- ভারত বিভিন্ন ভাষা ও সং সংস্কৃষ্টির মিলনভূমি। এখানকার প্রতিটি জনগোষ্ঠীর ভাষা ও সংস্কৃতির প্রতি গুরুত্ব প্রদান করে জাতীয় সংহতির দৃঢতা রক্ষা করা সরকারের বিবেচনাধীন বিষয়।।

➡ স্বাধীন ভারতে সহজভাবে লাভ করতে পারা দু'টি লক্ষ্যঃ- স্বাধীন ভারতের সামনে প্রধান লক্ষ্য ছিল তিনটি। যথা- জাতীয় ঐক্য ও সংহতি প্রতিষ্ঠা করা, দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা এবং জনসাধারণের কল্যাণ সাধান করা। এই লক্ষ্যসমূহ পূরণে ভারত বহুলাংশে সফল হয়েছে। ভারত স্বাধীনতার পর জাতীয় ঐক্য ও সংহতি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে এক অনন্য নজির গড়েছে। ভারতের মত বিশাল একটি দেশে প্রাকৃতিক ঐক্য গড়ে উঠেছে।। তাছাড়া নানা জাতি, ধর্ম ও ভাষাভাষী মানুষের মধ্যে ঐক্য ও সংহতি বিরাজ করছে। দ্বিতীয়ত, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রেও ভারত বিশ্বের মধ্যে অন্যতম একটি সফল রাষ্ট্র। স্বাধীনতার পর ১৯৫২ সালের মধ্যে দেশের সবক'টি অঞ্চলে সার্বজনীন প্রাপ্তবয়স্ক ভোটাধিকারের ভিত্তিতে গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এভাবে স্বাধীন ভারত বিভিন্ন লক্ষ্যসমূহ পূরণ করতে সক্ষম হয়েছে।

➡ জাতীয় আন্দোনের নেতৃবৃদ্ধ দুটি উদ্দেশ্যে সম্বন্ধে একমত ছিলেন। যথা- (ক) স্বাধীনতার পর দেশকে গণতান্ত্রিক সরকারের মাধ্যমে চালানো এবং (খ) সরকার সবার হিতে পরিচালিত হবে।

➡ স্বাধীনতার সময় ভারতের পূর্ব ও পশ্চিম অঞ্চলে জাতি গঠন প্রক্রিয়ায় দুটি মূল পার্থক্য ছিল:

  • (ক) ঔপনিবেশিক শাসন ব্যবস্থা: পূর্বাঞ্চলে (বাংলা, আসাম) ব্রিটিশ শাসন বেশি কেন্দ্রীভূত ও প্রত্যক্ষ ছিল, যেখানে পশ্চিমাঞ্চলে (গুজরাট, মহারাষ্ট্র) স্থানীয় রাজ্য ও জমিদারি ব্যবস্থার প্রভাব বেশি ছিল।
  • (খ) সাংস্কৃতিক বিকাশ: পূর্বাঞ্চলে বাঙালি রেনেসাঁস ও হিন্দু-মুসলিম সংস্কৃতির মিশ্রণ জাতিগত চেতনাকে প্রভাবিত করেছিল, যেখানে পশ্চিমাঞ্চলে মারাঠি ও গুজরাটি সাহিত্য-সংস্কৃতি স্থানীয় জাতীয়তাবাদকে শক্তিশালী করেছিল।

দেশভাগ: বাস্তুচ্যুতি ও পুনর্বাসন

➡ বৃটিশ গভর্নর মাউন্ট ব্যাটেন ১৯৪৭ সালের ৩ জুন ঘোষণা করেছিলেন যে, ১৯৪৮ সালের জুন মাসের পরিবর্তে ১৯৪৭ সালের আগস্ট মাসে ভারত বিভাজনের মাধ্যমে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হবে।

➡ দ্বি-জাতি তত্ত্ব: এটি হল এমন একটি ধারণা যার ভিত্তিতে ভারতে হিন্দু-মুসলমান দু'টি জাতির উদ্ভব ঘটে। এই তত্ত্বের প্রধান প্রবক্তা ছিলেন মুসলিম লীগ নেতা মোহাম্মদ আলি জিন্নাহ। ১৯৪০ সালে মুসলিম লীগের লাহোর অধিবেশনে (লাহোর প্রস্তাব) এই তত্ত্ব আনুষ্ঠানিকভাবে গৃহীত হয়, যেখানে মুসলমানদের জন্য পৃথক রাষ্ট্রের দাবি উত্থাপিত হয়। এই ধারণার ভিত্তিতে ১৯৪৭ সালে লর্ড মাউন্টব্যাটেনের পরিকল্পনা অনুসারে ভারত বিভাজনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ফলস্বরূপ, ১৯৪৭ সালের ১৪-১৫ অগাস্ট মধ্যরাতে ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম হয়।

➡ স্বাধীনতার পূর্বে মুসলিম লীগ দ্বি-জাতি তত্ত্বের পোষকতা করেছিল। এই তত্ত্বের অন্তর্ভুক্ত রাষ্ট্র দু'টি হল- ভারত ও পাকিস্তান।

➡ ১৯৪৭ সালে দুটি জাতি রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়েছিল। রাষ্ট্র দু'টি হলো- ভারত ও পাকিস্তান।

➡ দ্বি-রাষ্ট্র সূত্রের তাৎক্ষণিক ফলশ্রুতি ছিল ধর্মের ভিত্তিতে দেশভাগ এবং নতুন রাষ্ট্র পাকিস্তান গঠন।

➡ ভারত বিভাজনের প্রক্রিয়াঃ দ্বি-জাতি তত্ত্বের ধারণার ওপর ভিত্তি করে লর্ড মাউন্ট ব্যাটেনের পরিকল্পনা অনুসারে ভারত বিভাজন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। এই প্রক্রিয়া সম্মন্ধীয় নীতি ও সমস্যাগুলো নিম্নরূপ।।

দেশ বিভাজনের নীতি:- দেশ বিভাজনের ক্ষেত্রে সংখ্যাগরিষ্ঠতার নীতি অনুসরণ করা হয়েছিল। অর্থাৎ যে সব অঞ্চলে মুসলিমরা সংখ্যাগরিষ্ঠ সে সব অঞ্চল নিয়ে পাকিস্থান রাষ্ট্র গড়ে উঠে এবং অবশিষ্টাংশ ভারতের সঙ্গে থাকে।

দেশ বিভাজন সম্পর্কিত সমস্যাঃ-(ক) বৃটিশ ভারতে এমন কোন বলয় ছিল না যেখানে মুসলিমরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ। ফলে প্রদত্ত নীতি অনুসারে দেশ বিভাজনের ক্ষেত্রে সমস্যা সৃষ্টি হয়। অবশেষে পশ্চিম ও পূর্ব পাকিস্তান দুটি পৃথক ভূখণ্ড নিয়ে পাকিস্তান গঠনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।

(খ) মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চলের অনেক নেতারা দেশ বিভাজনের বিরোধী ছিলেন। তন্মধ্যে দক্ষিণ-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশের অবিসংবাদি নেতা খান আব্দুল গফফুর খানের ভূমিকা বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য। এই বিরোধীতার জন্যও দেশ বিভাজনে সমস্যা সৃষ্টি হয়।

(গ) পাঞ্জাব ও বাংলার মতো প্রদেশে মুসলিম ও অমুসলিম জনসংখ্যা মিশ্র ছিল। নীতি অনুসারে এই রাজ্যগুলো দ্বিখণ্ডিত হয়। ফলে সীমান্তের দুই পারে সংখ্যালঘু সমস্যা সৃষ্টি হয়। যথা-(i) দুই দেশের সংখ্যালঘুরা সাম্প্রদায়িক আক্রমণের লক্ষ্য হয়ে উঠেন। (ii) উভয় প্রান্তে লক্ষ লক্ষে সংখ্যালঘু নিজেদের ঘর-বাড়ি ছেড়ে শরণার্থী হলেন।

➡ খান আবদুল গফফুর খান / ফ্রন্টিয়ার গান্ধী ছিলেন দক্ষিণ-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশের অবিসংবাদী নেতা, যিনি দ্বি-জাতি তত্ত্বের বিরোধিতা করেছিলেন।

➡ দেশ বিভাজন সম্পকিত দু'টি সমস্যা/ পরিণামঃ (ক) সাম্প্রদায়িক অস্থিরতা- দেশ ভাংবার ফলে অমৃতসর, কলকাতা, লাহোর ইত্যাদি অঞ্চলে সাম্প্রদায়িক হিংসা সৃষ্টি হয়েছিল। (খ) শরণার্থী সমস্যা- দেশ ভাগের ফলে সীমান্তের দুই পারে লক্ষ লক্ষে সংখ্যালঘু নিজেদের ঘর-বাড়ি ছেড়ে শরণার্থী হয়েছিলেন।

➡ দেশ বিভাজনের ফলে সাম্প্রদায়িক অঞ্চলে পরিণত হওয়া দুটি রাজ্যের নাম- পাঞ্জাব ও বাংলা।

➡ দেশ বিভাজনের ফলে সাম্প্রদায়িক অঞ্চলে পরিণত হওয়া দুটি শহরের নাম কলকাতা ও অমৃতসর।

➡ ভারত বিভাজনের পরিণতিসংহঃ দ্বি-জাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাজন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম হয়। এই বিভাজনের পরিণতি ছিল অত্যন্ত নির্মী ন এবং হৃদয় বিদারক, যা নিম্নে আলোচনা করা হলো:

সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা: ভারত বিভাজনের ফলে সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ তীব্র আকার ধারণ করে। কলকাতা এবং পাঞ্জাবের অমৃতসর শহর সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার প্রধান কেন্দ্রে পরিণত হয়। পাঞ্জাব ও বঙ্গদেশের বিভাজনের কারণে এই অঞ্চলগুলোতে হিন্দু, মুসলিম ও শিখ সম্প্রদায়ের মধ্যে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। এই দাঙ্গায় অসংখ্য মানুষ প্রাণ হারান এবং সম্পত্তির ব্যাপক ক্ষতি হয়।

শরণার্থী সমস্যা: দেশভাগের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ গুরুতর পরিণতি ছিল সীমান্তের দুই পারে শরণার্থী সমস্যা। ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা উভয় দেশে সাম্প্রদায়িক আক্রমণের শিকার হন। ফলে লক্ষ লক্ষ মানুষ তাদের ঘরবাড়ি, সম্পত্তি ও জীবনের সঞ্চয় ঢে শরণার্থী হতে বাধ্য হন। পাঞ্জাব ও বঙ্গদেশ থেকে হিন্দু ও শিখরা ভারতে, এবং মুসলমানরা পাকিস্তানে পালিয়ে যান। এই শরণার্থী সংকট উভয় দেশের অর্থনীতি ও সমাজের ওপর গভীর প্রভাব ফেলে।

সংখ্যালঘু সমস্যা: দেশভাগের ফলে উভয় দেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি হয়। ভারতে মুসলিম এবং পাকিস্তানে হিন্দু ও শিখ সংখ্যালঘুরা সাম্প্রদায়িক হিংসা ও বৈষম্যের শিকার হন।

➡ দেশ বিভাজন সম্পর্কিত এসব ঘটনাবলী সমকালীন কবি, সাহিত্যিক ও চলচ্চিত্র নির্মাতাদের হৃদয়কে স্পর্শ করেছিল। তাই দেশভাগের আখ্যান বর্ণনা করতে গিয়ে তারা 'হৃদয়ের বিভাগ' শব্দযুগল ব্যবহার করেন।

➡ (ক) ভারত বিভাজন দ্বি-জাতি তত্ত্বের ফলশ্রুতি ছিল। (খ) পাঞ্জাব ও বঙ্গদেশ ধর্মের ভিত্তিতে ভাগ করা হয়েছিল। (গ) পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তান দুটি পৃথক পৃথক ভূখন্ড ছিল। (ঘ) দেশভাগ প্রকল্পে মানুষকে দেশান্তর করার পরিকল্পনা ছিল না।

Post Top Ad

Pages

SoraTemplates

Best Free and Premium Blogger Templates Provider.

Buy This Template