View All Notes
NOTICE

Tuesday, June 3, 2025

জাতি গঠনের প্রত্যাহ্বানসমূহ - ২ || Political Science Class 12 || Chapter Summary

দেশীয় রাজ্যসমূহের সংহতি সাধন ও রাজ্য পুনর্গঠন

দেশীয় রাজ্যসমূহের সংহতি সাধন ও রাজ্য পুনর্গঠন

দশীয় রাজ্য সমূহের সংহতি সাধন

➡ ব্রিটিশ ভারতে দুই ধরনের অঞ্চল ছিল:

  • (ক) দেশীয় রাজ্য: ব্রিটিশ সার্বভৌমত্বের অধীনে দেশীয় রাজার দ্বারা শাসিত অঞ্চল। এই ধরণের রাজ্য ব্রিটিশ আধিপত্য স্বীকার করে এক প্রকার স্বায়ত্তশাসন ভোগ করত, এই ব্যবস্থাকে ব্রিটিশ রাজ্যের সার্বভৌমত্ব বলা হত।
  • (খ) ব্রিটিশ ভারতীয় প্রদেশ: যেসব প্রদেশসমূহ সম্পূর্ণরূপে বৃটিশ সংসদ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ছিল সেগুলোকে বৃটিশ ভারতীয় প্রদেশ বলা হত। এই প্রদেশ সমূহের কোন ধরনের স্বাধীনতা ছিল না।

দেশীয় রাজ্য সমস্যা: ১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীনতা লাভের সময় উপমহাদেশের প্রায় অর্ধেক ভূখণ্ডে ছিল ৫৬৫টি দেশীয় রাজ্য। স্বাধীনতা আইনে বলা হয়, এই রাজ্যগুলি ভারত বা পাকিস্তানে যোগ দিতে পারবে। ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রের ঐক্য ও অখণ্ডতার জন্য এই রাজ্যগুলিকে একত্রীকরণ অপরিহার্য ছিল। কিন্তু কতিপয় দেশীয় রাজ্য স্বাধীন অস্থিত্বের দাবি করলে সমস্যার সৃষ্টি হয়।

দেশীয় রাজ্যগুলির ভারতভুক্তি সম্পর্কে সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি: দেশীয় রাজ্যগুলির ভারতভুক্তি সম্পর্কে ভারত সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি তিনটি মূল বিবেচনার ওপর ভিত্তি করে ছিল: (ক) অধিকাংশ দেশীয় রাজ্যের জনগণ ভারতীয় ইউনিয়নে যোগ দিতে ইচ্ছুক ছিল। (খ) সরকার কিছু অঞ্চলকে স্বায়ত্তশাসন প্রদানে নমনীয় মনোভাব পোষণ করেছিল। (গ) দেশভাগের প্রেক্ষাপটে জাতীয় সংহতি ও সীমানা নির্ধারণে সরকার চরম গুরুত্ব আরোপ করেছিল।

সামিলকরণের দলিল: এই চুক্তিখানার মূল বিধান ছিল যে, দেশীয় রাজ্যসমূহ ভারত যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গরাজ্যে পরিণত হবে।

দেশীয় রাজ্যগুলির একত্রীকরণ

➡ সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের নেতৃত্বে দেশীয় রাজ্যগুলির একত্রীকরণ সফলভাবে সম্পন্ন হয়। ভারত সরকারের আহ্বানে অধিকাংশ রাজ্য ‘ইন্সট্রুমেন্ট অফ অ্যাকসেশন’ স্বাক্ষর করে ভারতীয় ইউনিয়নে যোগ দেয়। তবে জুনাগড়, হায়দ্রাবাদ, মণিপুর ও কাশ্মীরের ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দেয়।

  • জুনাগড়: ১৯৪৮ সালে জনমতের ভিত্তিতে ভারতে যুক্ত হয়।
  • হায়দ্রাবাদ: ১৯৪৮ সালের সেপ্টেম্বরে সামরিক অভিযানের পর ভারতে অন্তর্ভুক্ত হয়।
  • মণিপুর: ১৯৪৮ সালের সেপ্টেম্বরে মহারাজা বোধচন্দ্র সিংহের উপর চাপ সৃষ্টি করে ভারতে যুক্ত করা হয়। রাজ্যটি ১৯৪৯ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতে যোগদান করে।
  • কাশ্মীর: ১৯৪৮ সালে পাকিস্তানের আক্রমণের পর রাজা হরি সিং চুক্তি স্বাক্ষর করে ভারতের সঙ্গে যুক্ত করেন।

এভাবে দেশীয় রাজ্যগুলির একত্রীকরণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়।

➡ বৃটিশ ভারতের দেশীয় রাজ্য হায়দ্রাবাদের শাসককে নিজাম বলা হত।

হায়দ্রাবাদের গণ আন্দোলন ও ভারতে অন্তর্ভুক্তি

➡ ১৯৪০ সালের ১৫ জুন হায়দ্রাবাদের নিজাম ভারতের সঙ্গে একটি স্থিতাবস্থা চুক্তি স্বাক্ষর করেন, যা দুই পক্ষের মধ্যে সম্পর্ক বজায় রাখার অস্থায়ী ব্যবস্থা ছিল। কিন্তু ১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীনতা লাভের পর নিজাম হায়দ্রাবাদকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠার দাবি জানান। এই দাবির পাশাপাশি তিনি রাজ্যে দমনমূলক শাসন চালান, যার ফলে জনসাধারণের মধ্যে তীব্র অসন্তোষের সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে কৃষক সম্প্রদায় নিজামের নির্যাতন ও শোষণের শিকার হয়। এই অত্যাচারের বিরুদ্ধে কৃষকরা বিদ্রোহ শুরু করেন, যা ক্রমশ রাজ্যব্যাপী গণ আন্দোলনে রূপ নেয়। এই পরিস্থিতিতে ভারত সরকার হায়দ্রাবাদের অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা এবং জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজনীয়তার কথা বিবেচনা করে কঠোর পদক্ষেপ নেয়। ১৯৪৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ভারত সরকার একটি সামরিক অভিযান শুরু করে। এই অভিযানে ভারতীয় সেনাবাহিনী হায়দ্রাবাদ দখল করে। এরপর 'নিজাম' ‘ইন্সট্রুমেন্ট অফ অ্যাকসেশন’ স্বাক্ষর করে হায়দ্রাবাদকে ভারতীয় ইউনিয়নে যুক্ত করেন। এভাবে জনগণের গণ আন্দোলন এবং ভারত সরকারের কৌশলগত সামরিক হস্তক্ষেপের মাধ্যমে ১৯৪৮ সালে হায়দ্রাবাদ ভারতের অংশ হয়ে ওঠে।

➡ নিজামের দমনমূলক নীতির ফলে হায়দ্রাবাদের জনসাধারণ তথা কৃষক শ্রেণী তার বিরোধিতা করেন।

মণিপুরের ভারতভুক্তি

➡ ১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীন হওয়ার সময় মণিপুরের মহারাজা বোধচন্দ্র সিংহ রাজ্যের স্বায়ত্তশাসন বজায় রাখার শর্তে ভারতের সঙ্গে একটি স্থিতাবস্থা চুক্তি স্বাক্ষর করেন। স্বাধীনতার পর জনগণের গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষার চাপে ১৯৪৮ সালের জুন মাসে মণিপুরে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, যার মাধ্যমে সাংবিধানিক গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়। কিন্তু নবগঠিত রাজ্য বিধানসভায় ভারতীয় ইউনিয়নে যোগদান নিয়ে তীব্র মতবিরোধ দেখা দেয়, কারণ অনেকে মণিপুরের স্বাধীন অস্তিত্ব বজায় রাখতে চেয়েছিলেন।

এই পরিস্থিতিতে ভারত সরকার জাতীয় ঐক্যের স্বার্থে কঠোর অবস্থান নেয়। ১৯৪৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে মহারাজা বোধচন্দ্র সিংহের উপর কূটনৈতিক চাপ প্রয়োগ করে ভারত সরকার ‘ইন্সট্রুমেন্ট অফ অ্যাকসেশন’ স্বাক্ষর করায়, যদিও রাজ্য বিধানসভার পরামর্শ গ্রহণ করা হয়নি। ফলে ১৯৪৯ সালের অক্টোবরে মণিপুর আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতীয় ইউনিয়নে অন্তর্ভুক্ত হয়।

➡ ভারত স্বাধীন হওয়ার সময় মণিপুরের মহারাজা ছিলেন বোধ চন্দ্র সিংহ।

➡ সার্বজনীন ভোটাধিকারের ভিত্তিতে মণিপুর রাজ্যে (১৯৪৮ সালের জুন মাসে) প্রথম সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।

জুনাগড়

➡ পাকিস্তান সীমান্তে অবস্থিত জুনাগড় রাজ্যের নবাব স্বাধীনতার পর পাকিস্তানের সঙ্গে যোগদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। কিন্তু রাজ্যের জনসাধারণ ভারতের সাথে যুক্ত হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেন। রাজ্যে শুরু হয় তীব্র গণ আন্দোলন। অবশেষে নবাব পালিয়ে যেতে বাধ্য হন। রাজ্যে অনুষ্ঠিত গণভোটে সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামত ভারতের পক্ষে যায়। এভাবে জনগণের ইচ্ছা প্রকাশের দ্বারা ১৯৪৮ সালে জুনাগড় রাজ্য ভারতের সঙ্গে যুক্ত হয়।

রাজ্য পুনর্গঠন

রাজ্য পুনর্গঠন: ঔপনিবেশিক শাসনে রাজ্যগুলির সীমানা শাসনতান্ত্রিক সুবিধা অনুযায়ী করা হয়েছিল। স্বাধীনতার পর দেশের ভাষিক ও সাংস্কৃতিক ভিন্নতার প্রতি লক্ষ্য রেখে ভারতীয় রাজ্যগুলির আভ্যন্তরীণ সীমানা নির্ধারণ করা হয়। এই প্রক্রিয়াকে 'রাজ্য পুনর্গঠন' বলা হয়।

➡ ১৯২০ সালে কংগ্রেসের নাগপুর অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। (এই অধিবেশনে প্রাদেশিক কংগ্রেস কমিটি ভাষিক অঞ্চল অনুযায়ী গঠিত হয়; বৃটিশ ভারতের শাসনতান্ত্রিক বিভাজন অনুযায়ী হয়নি।)

➡ স্বাধীনতার পর প্রথমে ধারণা করা হয়েছিল যে, ভাষা ভিত্তিক রাজ্য গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হলে স্বতন্ত্র রাজ্য গঠনের দাবি বিচ্ছিন্নতাকে উৎসাহ দেবে এবং দেশের ঐক্য বিপন্ন হবে। ফলে নব প্রতিষ্ঠিত জাতির উপর চাপ সৃষ্টি হবে।

➡ 'বিশালান্ধ্র' আন্দোলন হল ভাষাভিত্তিক রাজ্য গঠনের দাবিতে ডাকা একটি আন্দোলন। এই আন্দোলনের দাবি ছিল, তেলেগু ভাষিক অঞ্চলকে মাদ্রাজ প্রদেশ থেকে আলাদা করে স্বতন্ত্র অন্ধপ্রদেশ রাজ্য গঠন করা।

➡ পট্টি শ্রীরামালু ছিলেন প্রবীণ গান্ধীবাদী ও কংগ্রেস নেতা। তিনি স্বতন্ত্র অন্ধ্রপ্রদেশের দাবিতে অনশন করে মৃত্যুবরণ করেন।

➡ ১৯৫২ সালের ডিসেম্বর মাসে স্বতন্ত্র অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্য গঠন করা হয়।

➡ স্বাধীনতার পর কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্য পুনর্গঠন প্রক্রিয়া শুরু করে। এ মর্মে ফজল আলীর নেতৃত্বে ১৯৫৩ সালে রাজ্য পুনর্গঠন আয়োগ গঠন করা হয়।

➡ রাজ্য পুনর্গঠন আয়োগ ভাষা ও সংস্কৃতির ভিত্তিতে রাজ্যসমূহের শ্রেণী বিন্যাসের পরামর্শ দেয়।

➡ রাজ্য পুনর্গঠন আয়োগের প্রধান কার্যাবলী বা সুপারিশ সমূহ নিম্নরূপঃ (ক) বিভিন্ন ভাষাভাষী মানুষের সাংস্কৃতিক ও সমন্বয় সাধানকারী চাহিদার প্রতি যথোপযুক্ত দৃষ্টি নিক্ষেপ করা। (খ) হিন্দি ভাষা ব্যতীত অন্যান্য আঞ্চলিক ভাষা সমূহের প্রতি দৃষ্টিপাত করা। (গ) ভাষাভিত্তিক রাজ্য গঠন করা। (ঘ) ভাষিক সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা প্রদান করা।

➡ ১৯৫৬ সালে রাজ্য পুনর্গঠন আইন গ্রহণ করা হয়। এই আইনের ভিত্তিতে ১৪ রাজ্য ও ৬ টি কেন্দ্র শাসিত অঞ্চল গঠন করা হয়।

➡ ভাষার ভিত্তিতে রাজ্য গঠনের দু'টি ইতিবাচক দিক- (ক) ভাষায় ভিত্তিতে রাজ্য গঠন কিছু কিছু অঞ্চলে গণতান্ত্রিক রাজনীতি ও নেতৃত্বের মৌলিক পার্থক্য এনেছে। (খ) ভাষা ভিত্তিক রাজ্যের সীমা নির্ধারণ কিছুটা সাম্যের ভিত্তি তৈরি করেছে। অপর দিকে জাতীয় ঐক্য শক্তিশালী হয়েছে।

➡ অস্তিত্বের জন্য সংগ্রাম বইটি ১৯৫৩ সালে প্রকাশিত হয়েছিল।

➡ ১৯৫৬ সালের রাজ্য পুনর্গঠন আইনের ভিত্তিতে গঠিত একটি রাজ্যের নাম- মধ্য প্রদেশ।

➡ ১৯৬০ সালে বোম্বে রাজ্যকে বিভক্ত করে মহারাষ্ট্র ও গুজরাট রাজ্য গঠিত হয়।

➡ ১৯৬৩ সালে নাগাল্যান্ড রাজ্য হিসাবে ঘোষিত হয়।

➡ ১৯৬৬ সালে পাঞ্জাব রাজ্য গঠিত হয়। তখন বৃহত্তর পাঞ্জাব রাজ্য হতে হরিয়ানা ও হিমাচল প্রদেশকে বিচ্ছিন্ন করা হয়।

➡ ১৯৭২ সালে মেঘালয়কে আসাম থেকে আলাদা করা হয়। ঐ বছরই মণিপুর ও ত্রিপুরা রাজ্য হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে।

➡ শিলং অসমের রাজধানী ছিল। ১৯৭২ সালে মেঘালয় রাজ্য গঠনের পর এটি অসম থেকে পৃথক হয়।

➡ ১৯৭৫ সালে সিকিম ২২তম রাজ্য হিসাবে ভারতের সাথে যুক্ত হয়। ২০০২ সালে রাজ্যটিকে উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় কাউন্সিলের সাথে যুক্ত করা হয়।

➡ ১৯৮৭ সালে অরুণাচল ও মিজোরাম রাজ্য সংগঠিত হয়।

➡ ২০০০ সালে ঝাড়খন্ড, ছত্তিশগড় ও উত্তরাঞ্চল রাজ্য গঠিত হয়।

➡ ২০১৪ সালে অন্ধ্র প্রদেশ থেকে আলাদা হয়ে তেলেঙ্গানা রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি ভারতের ২৯তম রাজ্য।

➡ বর্তমানে ভারতে মোট ২৮টি রাজ্য এবং ৮টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল রয়েছে। ২০১৯ সালে জম্মু ও কাশ্মীর পুনর্গঠিত হয়ে দুটি কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলে বিভক্ত হয়।

➡ রাজনৈতিক ও প্রশাসনীয় ভিত্তিতে দেশের মধ্যে পৃথক সীমা নির্ধারণের উদাহরণ- ঝাড়খন্ড ও ছত্তিশগড়।

➡ ভৌগলিক অবস্থিতির উপর ভিত্তি করে সীমা নির্ধারণের উদাহরণ- হিমাচল প্রদেশ ও উত্তরাখন্ড।

➡ ধর্মের ভিত্তিতে সীমা নির্ধারণ- ভারত ও পাকিস্থান।

➡ ভাষার ভিত্তিতে সীমা নির্ধারণ- পাকিস্থান ও বাংলাদেশ।

➡ এক সময় কেন্দ্র শাসিত অঞ্চল হিসাবে থাকা বর্তমান দু'টি রাজ্যের নাম- গোয়া এবং অরুণাচল প্রদেশ।

➡ গোয়াকে মহারাষ্ট্রের সঙ্গে সংযুক্ত করা হয় নি; কারণ গোয়ার অধিকাংশ লোক মহারাষ্ট্রের বাইরে থাকার পক্ষে ভোট দিয়েছিল।

Post Top Ad

Pages

SoraTemplates

Best Free and Premium Blogger Templates Provider.

Buy This Template