View All Notes
NOTICE

Tuesday, June 3, 2025

ভারতের বৈদেশিক সম্পর্ক|| Political Science - Class 12 || Chapter Summary -1

ভারতের বৈদেশিক সম্পর্ক (প্রথম অংশ): বিদেশ নীতি ও নেহেরুর ভূমিকা

ভারতের বৈদেশিক সম্পর্ক (প্রথম অংশ)

ক - বিদেশ নীতি

বিদেশ নীতির সংজ্ঞা

একটি স্বাধীন দেশ বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের ক্ষেত্রে যে নীতি বা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে তাকে বৈদেশিক নীতি বলা হয়।

বৈদেশিক নীতির উপাদানসমূহ

দেশের আভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক বা আন্তর্জাতিক পরিবেশ একটি দেশের বৈদেশিক নীতিকে প্রভাবিত করে। নীচে রাষ্ট্রের বৈদেশিক নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে প্রভাব সৃষ্টিকারী কতগুলো উপাদান তুলে ধরা হল:

আভ্যন্তরীণ দিক

  • আয়তন: দেশের আয়তন বিদেশ নীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। বিশাল আয়তনবিশিষ্ট দেশ সাধারণত বিদেশ নীতিতে তীব্র প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হয়।
  • ভৌগলিক অবস্থান: ভৌগলিক অবস্থান কোনো দেশের পররাষ্ট্রনীতিকে ভীষণভাবে প্রভাবিত করে। বিশেষ করে প্রতিরক্ষা ও বৈদেশিক আক্রমণগত দিকটা অনেকাংশে ভৌগলিক অবস্থানের উপর নির্ভর করে।
  • অর্থনৈতিক পরিস্থিতি: দেশের আর্থিক অবস্থা বিদেশ নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। উন্নত দেশসমূহ বিদেশ নীতিতে গভীরভাবে নিমগ্ন থাকে।
  • ইতিহাস: কোনো দেশের বৈদেশিক নীতি প্রণয়নের সময় অতীত ঘটনা প্রবাহ বা ইতিহাসকে মাথায় রাখা হয়।
  • রাজনৈতিক নেতৃত্ব: দেশের সুনেতৃত্ব বিদেশ নীতির একটি প্রধান উপাদান। সুযোগ্য নেতৃত্ব দেশের সঠিক বিদেশ নীতি পরিচালনা করতে পারে।

বাহ্যিক উপাদান

  • বিশ্ব রাজনৈতিক পরিস্থিতি: বিশ্ব রাজনৈতিক পরিস্থিতির উপর ওয়াকিবহাল হয়ে দেশের বিদেশ নীতি প্রণয়ন করা হয়।
  • প্রতিবেশী রাষ্ট্রের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া: এর উপরও কোনো দেশের বিদেশ নীতি কমবেশি নির্ভরশীল।

বিদেশ নীতির মুখ্য দুটি দিক

  • আভ্যন্তরীণ দিক
  • বাহ্যিক দিক (অথবা তাত্ত্বিক দিক ও প্রায়োগিক দিক)

খ - ভারতের বৈদেশিক নীতি

ভারতের সংবিধানের ৫১ নং অনুচ্ছেদে বৈদেশিক নীতির উল্লেখ আছে।

বৈদেশিক নীতি সম্পর্কিত রাষ্ট্রের নির্দেশাত্মক নীতিসমূহ

  • আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা বৃদ্ধি।
  • অন্যান্য রাষ্ট্রের মধ্যে ন্যায়সঙ্গত ও সম্মানজনক সম্পর্ক রক্ষা।
  • আন্তর্জাতিক আইন ও সন্ধির প্রতি শ্রদ্ধা বৃদ্ধি।
  • সালিশির মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মীমাংসার ব্যাপারে রাষ্ট্র সচেষ্ট থাকবে।

ভারতীয় বিদেশ নীতির মৌলিক লক্ষ্য

  • দেশের ভৌগলিক অখন্ডতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা।
  • অর্থনৈতিক উন্নয়ন দ্রুততর করা।
  • আঞ্চলিক সংহতি রক্ষা করা ও প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে বন্ধুত্বসুলভ সম্পর্ক স্থাপন করা।
  • উপনিবেশবাদ ও সাম্রাজ্যবাদের বিরোধিতা।
  • আন্তঃরাষ্ট্রীয় শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখা।
  • আন্তর্জাতিক বিবাদসমূহ শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান করা।
  • জাতীয় নিরাপত্তা ও সুরক্ষা প্রদান করা।

ভারতের বৈদেশিক নীতির উপাদানসমূহ

  • জাতীয় স্বার্থ সুরক্ষা।
  • আর্থিক বিকাশ সাধনে উৎসাহ প্রদান।
  • উপনিবেশবাদ ও সাম্রাজ্যবাদের বিরোধিতা।
  • বিশ্বশান্তি ও নিরাপত্তা।

আভ্যন্তরীণ ও বহিঃউপাদান সমূহের বিবরণ

  • জাতীয় স্বার্থ সুরক্ষা: ভারতের জাতীয় স্বার্থ বৈদেশিক নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে।
  • আর্থিক বিকাশ: দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের দিকটা গুরুত্ব লাভ করেছে।
  • ঐতিহাসিক পটভূমি: সুদীর্ঘ ঐতিহাসিক পটভূমি প্রভাব বিস্তার করেছে।
  • জাতীয় আন্দোলন: ইংরেজদের বিরুদ্ধে চালিত জাতীয় আন্দোলন ভারতের বৈদেশিক নীতির উপর প্রভাব বিস্তার করেছে।
  • উপনিবেশবাদ ও সাম্রাজ্যবাদের বিরোধিতা: বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে জাতীয় মুক্তি আন্দোলন হলে ভারত তার প্রতি সমর্থন জানিয়েছে।
  • বিশ্বশান্তি ও নিরাপত্তা: ভারত বরাবরই বিশ্ব শান্তি ও নিরাপত্তার উদ্দেশ্যে বৈদেশিক নীতি প্রণয়ন করেছে।

ভারতের বৈদেশিক নীতির বৈশিষ্ট্য

  • পঞ্চশীল নীতি: স্বাধীনতার পর ভারত পঞ্চশীল নীতি গ্রহণ করে। এগুলো হল:
    • প্রতিটি দেশের ভৌগলিক অখন্ডতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি পারস্পরিক শ্রদ্ধা প্রদর্শন।
    • অনাক্রমণ।
    • অন্য রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করা।
    • পারস্পরিক সাম্য ও সহযোগিতা।
    • শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান।
  • জোট নিরপেক্ষতা: দ্বিমেরুকেন্দ্রিক বিশ্বে ভারত মার্কিন বা সোভিয়েত জোটে যোগ না দিয়ে জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের নেতৃত্ব প্রদান করেছিল।
  • সাম্রাজ্যবাদ বিরোধীতা: বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে জাতীয় মুক্তি আন্দোলন হলে ভারত সমর্থন জানিয়েছে।
  • নয়া উপনিবেশবাদ বিরোধিতা: নয়া উপনিবেশবাদের বিরোধীতা ভারতের বিদেশ নীতির অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
  • বর্ণবৈষম্যের বিরোধিতা: ভারত কমনওয়েলথ সম্মেলন, জোট নিরপেক্ষ আন্দোলন, সম্মিলিত জাতিপুঞ্জে বর্ণবৈষম্যের বিরুদ্ধে ভূমিকা রেখেছে।
  • বিশ্বশান্তি: ভারত যুদ্ধের বিরুদ্ধে এবং শান্তির পক্ষে অবস্থান নিয়েছে।
  • নিরস্ত্রীকরণ: ভারত নিরস্ত্রীকরণের জন্য সরব হয়েছে।

ভারতের বৈদেশিক নীতির প্রধান স্থপতি

ভারতের বৈদেশিক নীতির প্রধান স্থপতি ছিলেন পন্ডিত জহরলাল নেহেরু।

জাতীয় স্বার্থের অত্যাবশ্যক উপাদান

  • জাতীয় একতা এবং অখন্ডতা।
  • জাতীয় সুরক্ষা এবং সামাজিক ও অর্থনৈতিক মঙ্গল সাধন।

রাষ্ট্রসঙ্ঘে ভারতের ভূমিকা

ভারত রাষ্ট্রসঙ্ঘের প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের অন্যতম এবং স্বাধীনতার পর থেকে এটি জাতিসংঘে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। শান্তি, সহাবস্থান ও বৈশ্বিক উন্নয়নের পক্ষে ভারতের অবস্থান সুদৃঢ়। ভারত জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে অন্যতম বড় সৈন্য প্রেরণকারী দেশ, যা কঙ্গো, লেবানন, সুদানসহ বিভিন্ন দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠায় অবদান রেখেছে।

উপনিবেশবাদ ও বর্ণবৈষম্যের বিরুদ্ধে ভারতের অবস্থান ছিল স্পষ্ট ও সক্রিয়। পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা ও টেকসই উন্নয়নের পক্ষে ভারত জোরালো ভূমিকা নিয়েছে। উন্নয়নশীল দেশগুলোর স্বার্থ রক্ষায় ভারত জাতিসংঘে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে এবং নিরাপত্তা পরিষদে স্থায়ী আসনের দাবি জানিয়েছে।

গ - স্বাধীনতার পূর্বে ভারতের বৈদেশিক সম্পর্ক

স্বাধীনতার পূর্বে ভারতের জাতীয়তাবাদী নেতৃবৃন্দ ও অন্যান্য উপনিবেশগুলির অনুরূপ নেতাদের সংযোগ ছিল।

দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ চলাকালীন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু কর্তৃক ভারতীয় জাতীয় সৈন্যবাহিনী (Indian National Army/ INA) তৈরি করার মধ্য দিয়ে ভারতে বসবাসকারী ভারতীয় ও ভারতের মধ্যে স্বাধীনতা চলাকালীন যোগাযোগ সর্বপেক্ষা পরিষ্কারভাবে প্রকাশিত হয়েছিল।

ভারতীয় জাতীয় সৈন্যবাহিনী-এর প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু।

ঘ - নেহেরুর বিদেশ নীতি

ভারতের বৈদেশিক নীতির স্থপতি হলেন পণ্ডিত জহরলাল নেহেরু। তিনি স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র মন্ত্রী হিসেবে দেশের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ভিত্তি রচনা করেন।

নেহেরুর বৈদেশিক নীতির মৌলিক উদ্দেশ্য

  • জোট নিরপেক্ষ নীতি (Non-Alignment): শীতল যুদ্ধকালীন বিশ্বে শক্তিধর রাষ্ট্রগুলোর জোটে না গিয়ে ভারত স্বাধীন ও নিরপেক্ষ অবস্থান গ্রহণ করে। এটি শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের দৃষ্টান্ত স্থাপন করে।
  • বিশ্বশান্তি ও নিরস্ত্রীকরণ: নেহেরু বিশ্বাস করতেন, পরমাণু অস্ত্র নয়, শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানই উন্নয়নের পথ। তাই তিনি যুদ্ধবিরোধী ও নিরস্ত্রীকরণের পক্ষপাতী ছিলেন।
  • ঔপনিবেশিকতা ও বর্ণবৈষম্যের বিরোধিতা: আফ্রিকা ও এশিয়ার স্বাধীনতা আন্দোলনে নেহেরু নৈতিক সমর্থন দেন এবং জাতিসংঘে তাদের অধিকারের পক্ষে সোচ্চার হন।

নেহেরুর দৃষ্টিভঙ্গি

পণ্ডিত জহরলাল নেহেরু সামরিক শিবির থেকে দূরে থাকতে চেয়েছিলেন, কারণ তিনি বিশ্বাস করতেন যে সামরিক জোটে যুক্ত হওয়া একটি দেশের স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতিকে সীমিত করে। শীতল যুদ্ধকালীন বিশ্বে দুই পরাশক্তির (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়ন) প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জড়িয়ে পড়লে ভারতের শান্তি, উন্নয়ন ও নিরপেক্ষতা ক্ষতিগ্রস্ত হতো।

নেহেরু বৈদেশিক নীতিকে স্বাধীনতার একটি প্রয়োজনীয় নির্দেশনা বলে মনে করতেন, কারণ:

  • সার্বভৌমত্ব রক্ষা: বিদেশি প্রভাব থেকে মুক্ত ও স্বাধীন নীতি অনুসরণ করলেই প্রকৃত অর্থে স্বাধীনতা অর্জন সম্ভব।
  • আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন: শান্তিপূর্ণ পররাষ্ট্রনীতি দেশকে যুদ্ধের ব্যয় থেকে রক্ষা করে উন্নয়নমূলক কাজে মনোযোগ দেওয়ার সুযোগ করে দেয়।

রাজনৈতিক নেতৃত্ব ও বৈদেশিক নীতি

রাজনৈতিক নেতৃত্ব একটি দেশের বৈদেশিক নীতি নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নেতার চিন্তাধারা, আদর্শ, অভিজ্ঞতা ও আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণের দক্ষতা পররাষ্ট্রনীতির গতিপথ নির্ধারণ করে।

ভারতের ক্ষেত্রে বিভিন্ন নেতার শাসনকালে বৈদেশিক নীতিতে ভিন্নমাত্রার প্রতিফলন দেখা যায়। যেমন, জহরলাল নেহেরু অজোটনীতির প্রবক্তা ছিলেন। তিনি বিশ্বশান্তি, নিরস্ত্রীকরণ এবং ঔপনিবেশিক বিরোধিতায় বিশ্বাসী ছিলেন। অন্যদিকে, ইন্দিরা গান্ধী ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় ভূমিকা নিয়ে দৃঢ় পররাষ্ট্রনীতি প্রয়োগ করেন।

আফ্র-এশীয় সংহতি

১৯৪০ ও ১৯৫০-এর দশকগুলো জুড়ে নেহেরু ছিলেন এশিয়া সংহতির উৎসাহী প্রবক্তা। তার যুগটি এশিয়া ও আফ্রিকার নতুন স্বাধীনতাপ্রাপ্ত দেশগুলোর মধ্যে যোগাযোগ গড়ে ওঠার জন্য চিহ্নিত। ১৯৪৭ সালের মার্চ মাসে ভারত তার নেতৃত্বে এশিয়ার সম্পর্ক সম্মেলন আহ্বান করে। ভারত ওলন্দাজ ঔপনিবেশিক শাসন থেকে ইন্দোনেশিয়ার স্বাধীনতা সংগ্রামের সমর্থনে ১৯৪৯ সালে একটি আন্তর্জাতিক বৈঠক আহ্বান করে।

১৯৫৫ সালে ইন্দোনেশিয়ার বান্দুং শহরে আফ্র-এশীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়, যা বান্দুং সম্মেলন নামে পরিচিত। এই সম্মেলনে ২৯টি দেশের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেছিল। এটি গোষ্ঠী নিরপেক্ষ আন্দোলন (NAM) স্থাপনের পথ প্রশস্ত করে।

১৯৬১ সালে বেলগ্রেডে প্রথম গোষ্ঠী নিরপেক্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

জোট নিরপেক্ষ নীতি

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর পৃথিবীতে পুঁজিবাদী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে একটি গোষ্ঠী ও সমাজবাদী সোভিয়েত রাশিয়ার নেতৃত্বে আরেকটি গোষ্ঠীর সৃষ্টি হয়। এই গোষ্ঠীদ্বয়ের কোনটিতে যোগদান না করে উভয় শক্তি গোষ্ঠীর সঙ্গে সদ্ভাব বজায় রেখে নিজের জাতীয় স্বার্থ পূরণের জন্য যে বিদেশ নীতি গ্রহণ করা হয় তাকেই গোষ্ঠী নিরপেক্ষ বা জোট নিরপেক্ষ নীতি বলা হয়।

বিশ্ব পর্যায়ে দুটি শিবিরকে নেতৃত্বদানকারী শক্তিশালী দেশ দুটি হল - মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়ন।

জোট নিরপেক্ষতার কারণ

  • ভারত স্বাধীনভাবে বৈদেশিক নীতি গ্রহণ করে বিশ্ব রাজনীতিতে সম্মানজনক আসন লাভ করতে পারবে বলে নেতৃবৃন্দের দৃঢ় বিশ্বাস ছিল।
  • অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য ভারত সকল রাষ্ট্রের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশ রক্ষার উপর গুরুত্ব প্রদান করে।
  • গোষ্ঠী নিরপেক্ষ নীতি গ্রহণের মাধ্যমে পুঁজিবাদী ও সমাজবাদী উভয় গোষ্ঠী হতে অর্থনৈতিক সাহায্য লাভ করা সম্ভব হবে।
  • স্বাধীনতা লাভের সময় ভারত সামরিক দিক দিয়ে শক্তিশালী ছিল না। গোষ্ঠী নিরপেক্ষ নীতি গ্রহণ দ্বারা যুদ্ধের ভয়াবহতা হতে রক্ষা পাওয়া সহজ হয়।
  • স্বাধীনতা লাভের পর একমাত্র পাকিস্তান ব্যতীত অন্য কোনো রাষ্ট্র হতে ভারতের বিপদের আশঙ্কা ছিল না।

নিরপেক্ষতা ও গোষ্ঠী নিরপেক্ষতার মধ্যে পার্থক্য

নিরপেক্ষতা হলো আন্তর্জাতিক সংঘাতে একেবারেই জড়িত না থাকার নীতি, যেখানে কোনো পক্ষকে সমর্থন বা বিরোধিতা করা হয় না। এটি সাধারণত যুদ্ধকালীন অবস্থায় গ্রহণযোগ্য।

অন্যদিকে, গোষ্ঠী নিরপেক্ষতা হলো কোনো সামরিক জোটে না গিয়ে স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করা। এটি শান্তিকালীন অবস্থায়ও কার্যকর, যেমন শীতল যুদ্ধের সময় ভারতের অজোটনীতি।

পঞ্চশীল নীতি

প্রধানমন্ত্রী পন্ডিত জওহরলাল নেহেরু বিশ্বশান্তি রক্ষার্থে সম্রাট অশোকের আদর্শ ও ঐতিহ্য অনুসারে যে পাঁচটি নীতি ঘোষণা করেন সেগুলি পঞ্চশীল নামে পরিচিত। ১৯৫৪ সালে চীনের প্রধানমন্ত্রী ঝাউ-এন-লাই এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নেহেরুর মধ্যে পঞ্চশীল-এর ভিত্তিতে ভারত-চীন মৈত্রী চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।

পঞ্চশীলের মুখ্য নীতিসমূহ

  • প্রতিটি দেশের ভৌগলিক অখন্ডতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি পারস্পরিক শ্রদ্ধা প্রদর্শন।
  • অন্য দেশকে আক্রমণ না করা।
  • অন্য রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করা।
  • পারস্পরিক সাম্য ও সহযোগিতা।
  • শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান।

১৯৫৪ সালে ভারত ও চীনের মধ্যে পঞ্চশীল চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।

Post Top Ad

Pages

SoraTemplates

Best Free and Premium Blogger Templates Provider.

Buy This Template