View All Notes
NOTICE

Tuesday, June 3, 2025

ভারতের বৈদেশিক সম্পর্ক - ২ || Political Science Class 12 || Chapter Summary

ভারতের বৈদেশিক সম্পর্ক (দ্বিতীয় অংশ): প্রতিবেশী রাষ্ট্র ও পারমাণবিক নীতি

ভারতের বৈদেশিক সম্পর্ক (দ্বিতীয় অংশ)

প্রতিবেশী রাষ্ট্রসমূহের সঙ্গে যুদ্ধ

ভারতের প্রতিবেশী রাষ্ট্রসমূহের সঙ্গে গড়ে তোলা সম্পর্কের ভিত্তি স্বরূপ দুটি নীতি:

  • প্রতিবেশী কোনো দেশকে আক্রমণ না করা।
  • প্রতিবেশী কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ না করা।

ক - তিব্বত

  • তিব্বত এশিয়া মহাদেশের একটি মালভূমি অঞ্চল।
  • চীন প্রজাতন্ত্রের অন্তর্গত তিব্বত একটি স্বশাসিত অঞ্চল।
  • তিব্বত ঐতিহাসিকভাবে ভারত ও চীনের মধ্যে উত্তেজনার অন্যতম প্রধান কারণ।
  • ইতিহাসের বিভিন্ন পর্যায়ে চীন তিব্বতের উপর শাসনতান্ত্রিক নিয়ন্ত্রণ দাবি করেছে। বিভিন্ন পর্যায়ে তিব্বত স্বাধীনও ছিল।
  • ১৯৫০ সালে চীন তিব্বতের দখল নেয়।
  • ১৯৫৪ সালে ভারত ও চীনের মধ্যে পঞ্চশীল চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
  • ভারত তিব্বতের উপর চীনের দাবি মেনে নেয়।
  • ১৯৫৬ সালে চীনের প্রধানমন্ত্রী ঝাউ এনলাই-এর সরকারি ভারত ভ্রমণের সময় তিব্বতের আধ্যাত্মিক নেতা দলাই লামা এসেছিলেন।
  • দলাই লামা নেহেরুকে তিব্বতের ক্রমশ খারাপ হওয়া অবস্থার কথা বলেছিলেন।
  • ১৯৫৮ সালে চীনা দখলকারীর বিরুদ্ধে তিব্বতে সশস্ত্র বিদ্রোহ ঘটে।
  • অবস্থা খারাপ হয়েছে দেখে দলাই লামা ভারতীয় সীমানা অতিক্রম করে ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয় চান ও তা অনুমোদনও করা হয়।
  • চীন মনে করে যে, দলাই লামাকে আশ্রয় প্রদান করে ভারত সরকার তিব্বতকে সহযোগিতা করেছে। ফলে উভয় দেশের সম্পর্কের অবনতি ঘটে।

তিব্বত মালভূমি কীভাবে ভারত ও চীনের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে?

তিব্বত এশিয়া মহাদেশের একটি মালভূমি অঞ্চল যা ঐতিহাসিকভাবে ভারত ও চীনের মধ্যে উত্তেজনার অন্যতম প্রধান কারণ। ইতিহাসের বিভিন্ন পর্যায়ে চীন তিব্বতের উপর শাসনতান্ত্রিক নিয়ন্ত্রণ দাবি করেছে। বিভিন্ন পর্যায়ে তিব্বত স্বাধীনও ছিল। ১৯৫০ সালে চীন তিব্বতের দখল নেয়। ১৯৫৪ সালে ভারত ও চীনের মধ্যে পঞ্চশীল চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ভারত তিব্বতের উপর চীনের দাবি মেনে নেয়।

১৯৫৬ সালে চীনের প্রধানমন্ত্রী ঝাউ এনলাই-এর সরকারি ভারত ভ্রমণের সময় তিব্বতের আধ্যাত্মিক নেতা দলাই লামা এসেছিলেন। দলাই লামা নেহেরুকে তিব্বতের ক্রমশ খারাপ হওয়া অবস্থার কথা বলেছিলেন। ১৯৫৮ সালে চীনা দখলকারীর বিরুদ্ধে তিব্বতে সশস্ত্র বিদ্রোহ ঘটে। অবস্থা খারাপ হয়েছে দেখে দলাই লামা ভারতীয় সীমানা অতিক্রম করে ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয় চান ও তা অনুমোদনও করা হয়। চীন মনে করে যে, দলাই লামাকে আশ্রয় প্রদান করে ভারত সরকার তিব্বতকে সহযোগিতা করেছে। ফলে উভয় দেশের সম্পর্কের অবনতি ঘটে। এভাবে তিব্বত ভারত-চীন মতানৈক্যের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে পড়ে।

  • ১৯৫০ সালে চীন তিব্বতের দখল নেয়।
  • দলাই লামা ছিলেন তিব্বতের ধর্মীয় নেতা।

খ - চীন ও ভারত

ভারত-চীন সম্পর্ক

স্বাধীন ভারত চীনের সঙ্গে সম্পর্ক অতি বন্ধুত্বপূর্ণভাবে শুরু করে। ১৯৪৯ সালের বিপ্লবের পরে ভারত ছিল কমিউনিস্ট চীনকে প্রথম স্বীকৃতি দেওয়া দেশগুলোর মধ্যে একটি। নেহেরু চীনের প্রতি এতটাই আস্থাবান ছিলেন যে, চীন ভারত আক্রমণ করতে পারে এমনটাকে চরম অসম্ভাব্য বলে মনে করেছিলেন। ১৯৫৪ সালের ২৯ এপ্রিল উভয় দেশের মধ্যে পঞ্চশীল ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের নীতি ঘোষণা করা হলে দুই দেশের মধ্যে শক্তিশালী সম্পর্ক গড়ে ওঠে। চীন এবং ভারতীয় নেতাদের পরস্পরের দেশভ্রমণ উভয় দেশের সম্পর্ককে শক্তিশালী করেছিল। এভাবে স্বাধীনোত্তর যুগে চীন ও ভারতের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল।

১৯৫৪ সালে তিব্বত সম্পর্কে ভারতের প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু ও চীনের প্রধানমন্ত্রী ঝাউ এনলাই-এর মধ্যে হওয়া চুক্তি মর্মে যে পঞ্চশীল নীতি গ্রহণ করা হয়েছিল তাকে ভারত-চীন সম্পর্কের কেন্দ্রবিন্দু বলে বিবেচনা করা হয়।

ভারত-চীন যুদ্ধ

  • তিব্বতের আধ্যাত্মিক নেতা দলাই লামার ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয়কে কেন্দ্র করে উভয় দেশের সম্পর্কের অবনতি ঘটে।
  • ইত্যবসরে ভারত ও চীনের মধ্যে সীমানা বিবাদ আরম্ভ হয়।
  • চীন ভারতের দুটি অঞ্চলকে দাবি করে। এগুলো হল:
    • আকসাই চীন (লাডাক অঞ্চলের একাংশ)
    • NEFA (North Eastern Frontier Agency, বর্তমান অরুণাচল প্রদেশের অংশ)
  • এই বিবাদকে কেন্দ্র করে ১৯৬২ সালের অক্টোবর মাসে ভারত-চীন যুদ্ধ সংঘটিত হয়।
  • প্রথম আক্রমণ এক সপ্তাহ ধরে চলে এবং চীনারা বাহিনী অরুণাচলের কিছু গুরুত্বপূর্ণ অংশ দখল করে। পরের মাসে দ্বিতীয় আক্রমণের প্রবাহ আসে।
  • ভারত সমস্যা অতিক্রম করার জন্য আমেরিকা ও ব্রিটেনের কাছে অস্ত্র সাহায্যের অনুরোধ করে। এই সংঘর্ষের সময় রাশিয়া নিরপেক্ষ থাকে।
  • শেষ পর্যন্ত চীনারা একতরফাভাবে অস্ত্রবিরতি ঘোষণা করে।
  • চীনের আক্রমণের দায় স্বীকার করে তৎকালীন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ভি কৃষ্ণ মেননকে কেবিনেট থেকে সরে যেতে হয়। নেহেরুর নিজের ভাবমূর্তিও আঘাত পায়। প্রথমবার সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনা হয় এবং তা নিয়ে লোকসভায় বিতর্ক চলে।
  • চীন-ভারত সংঘর্ষ বিরোধীদেরকেও প্রভাবিত করেছিল। এই সংঘর্ষকে কেন্দ্র করে ১৯৬৪ সালে সিপিআই দলে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছিল।
  • চীন-ভারত সংঘর্ষ ভারতীয় নেতৃবৃন্দকে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের অবস্থা সম্পর্কে সচেতন করে। তখন নাগাল্যান্ড রাজ্যকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। মণিপুর ও ত্রিপুরা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হলেও তাদেরকে বিধানসভা নির্বাচন করার অধিকার দেওয়া হয়।
  • ১৯৬২ সালে চীন ভারত আক্রমণ করেছিল।
  • চীন-ভারত বিবাদের দুটি কারণ:
    • সীমানা বিরোধ
    • দলাই লামার আশ্রয়
  • ১৯১৪ সালে ম্যাকমোহন লাইনকে ভারত ও চীনের মধ্যে সীমারেখা বলে নির্ধারণ করা হয়েছিল।

ভারত ও চীনের সীমা বিবাদ

চীন-ভারত সীমা বিবাদ উভয় দেশের মধ্যে উত্তেজনার একটি প্রধান কারণ। দেশ দুটির সীমানা পশ্চিম, মধ্য ও পূর্ব এই তিনটি অংশে রয়েছে। ১৯১৪ সালে সিমলা চুক্তির মাধ্যমে স্যার হেনরি ম্যাকমোহন ভারত ও চীন (তিব্বত) বিভাজনকারী রেখা অঙ্কন করেছিলেন। এটি ম্যাকমোহন লাইন নামে পরিচিত। ম্যাকমোহন লাইনকে ভারত ও তিব্বত মেনে নিলেও চীন তখনকার চুক্তিতে স্বাক্ষর করেনি। পরবর্তীতে চীন এই লাইনকে অমান্য করে এবং পশ্চিম প্রান্তের আকসাই চীন ও লাডাক এবং পূর্ব প্রান্তের NEFA (বর্তমান অরুণাচল প্রদেশ)-এর বহু অঞ্চল দাবি করে। ১৯৫৯ সালে চীন আকসাই অঞ্চল দখল করে একটি সড়কও নির্মাণ করে।

১৯৬২ সালে সীমানা নিয়ে উভয় দেশের বিবাদ তুঙ্গে উঠে। চীন হঠাৎ করে বিবাদগ্রস্ত অঞ্চল দুটিতে আক্রমণ চালায়। প্রথ-sheikh_mujibur_rahman_1971১৯৬২ সালে সীমানা নিয়ে উভয় দেশের বিবাদ তুঙ্গে উঠে। চীন হঠাৎ করে বিবাদগ্রস্ত অঞ্চল দুটিতে আক্রমণ চালায়। প্রথমে প্রায় এক সপ্তাহ আক্রমণ চালিয়ে অরুণাচলের অনেক এলাকা জবরদখল করে। পরের মাসে দ্বিতীয় পর্যায়ের আক্রমণ আরম্ভ হয়। ভারতীয় সেনা পশ্চিমাঞ্চলের লাডাকে চীনের সেনাকে বাধা দেয়। কিন্তু পূর্বদিকে চীনের সেনাবাহিনী আসামের দিকে এগোতে থাকে। পরে চীন একপাক্ষিকভাবে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করে। সীমানা নিয়ে চীন ও ভারতের বিবাদ এখনও অব্যাহত রয়েছে।

ভারত ও চীনের সীমানা এবং অর্থনৈতিক সহযোগিতার অবস্থান

সীমা বিবাদ

চীন-ভারত সীমা বিবাদ উভয় দেশের মধ্যে উত্তেজনার একটি প্রধান কারণ। দেশ দুটির সীমানা পশ্চিম, মধ্য ও পূর্ব এই তিনটি অংশে রয়েছে। পশ্চিম দিকে আকসাই চীন ও লাডাক এবং পূর্ব দিকে অরুণাচল প্রদেশের কিছু অংশ নিয়ে উভয় দেশের সংঘর্ষ সৃষ্টি হয়। অঞ্চল দুটিকে নিয়ে ভারত ও চীনের মধ্যে বিবাদের বিষয়গুলির সমাধানসূত্র বের করতে হবে। এতে দুই দেশের সীমানা সমস্যার সমাধান হবে।

অর্থনৈতিক সহযোগিতা

স্বাধীন ভারত চীনের সঙ্গে সম্পর্ক অতি বন্ধুত্বপূর্ণভাবে শুরু করে। ১৯৪৯ সালের বিপ্লবের পরে ভারত ছিল কমিউনিস্ট চীনকে প্রথম স্বীকৃতি দেওয়া দেশগুলোর মধ্যে একটি। ১৯৫৪ সালে উভয় দেশের মধ্যে পঞ্চশীল চুক্তি স্বাক্ষরিত হলে দেশ দুটির মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতার ক্ষেত্র তৈরি হয়। বর্তমানে দুই দেশের পারস্পরিক মঙ্গলার্থে ভারত ও চীন বিরোধ মেটানোর দিকে দৃষ্টিপাত করা যেতে পারে। এতে উভয় দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক দৃঢ় হবে এবং অর্থনৈতিক সহযোগিতার ক্ষেত্র তৈরি হবে।

গ - ভারত ও পাকিস্তান

  • দেশ বিভাজনের পরপরই কাশ্মীর সমস্যা নিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বিবাদ শুরু হয়।
  • কাশ্মীর বিবাদ ভারত-পাকিস্তান সরকারের মধ্যে সহযোগিতা বন্ধ করেনি। দেশ বিভাগের সময় অপহৃত স্ত্রীলোকদের নিজ নিজ পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে উভয় সরকারই একসঙ্গে কাজ করে। ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের মধ্যস্থতায় নদীর জল বন্টনের ব্যাপারে দীর্ঘকালীন বিবাদের নিষ্পত্তি হয়।
  • ১৯৬০ সালে নেহেরু ও আয়ূব খানের মধ্যে ভারত-পাকিস্তান সিন্ধু জল চুক্তি স্বাক্ষরিত।

পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের দুটি উদ্বেগজনক বিষয়:

  • জম্মু ও কাশ্মীর
  • বাংলাদেশের স্বাধীনতা
  • সীমান্ত পারে উগ্রপন্থী কার্যকলাপ

কাশ্মীর সমস্যা

স্বাধীনতার পর থেকে কাশ্মীর সমস্যাকে কেন্দ্র করে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে তিক্ত সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। এই সমস্যা নিয়ে উভয় দেশের মধ্যে ১৯৪৭, ১৯৬৫ এবং ১৯৯৯-এ অন্তত তিনটি যুদ্ধ হয়েছে।

ভারত বিভাজনের সময় জম্মু ও কাশ্মীর একটি দেশীয় রাজ্য ছিল। কাশ্মীরের মহারাজা হরি সিং ভারত বা পাকিস্তানের সঙ্গে শামিল হওয়ার পরিবর্তে জম্মু-কাশ্মীরের স্বতন্ত্র স্থিতি বজায় রাখতে চেয়েছিলেন। কিন্তু হঠাৎ ১৯৪৭ সালের জুন মাসে পাকিস্তানের সৈন্য কাশ্মীর অধিগ্রহণের উদ্দেশ্যে অঞ্চলটিতে প্রবেশ করে। এই আক্রমণে সন্ত্রস্ত হয়ে মহারাজা হরি সিং ভারতের শরণাপন্ন হন। অবশ্য হরি সিং ভারতের সঙ্গে অন্তর্ভুক্তির চুক্তিতে স্বাক্ষর করার পর ভারতীয় সৈন্য কাশ্মীরকে পাকিস্তানি সৈন্য থেকে মুক্ত করতে এগিয়ে আসে। অবশেষে জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি ঘটে। জম্মু ও কাশ্মীর দেশীয় রাজ্যের অবসান ঘটে। পাকিস্তান কাশ্মীরের এক-তৃতীয়াংশ নিয়ন্ত্রণে নেয়। বাকি অংশের নিয়ন্ত্রণ নেয় ভারত। কিন্তু ভারত সমগ্র জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যটি তাদের বলে দাবি করে। পাকিস্তান এই দাবির বিরোধিতা করে। এভাবে কাশ্মীর সমস্যাকে কেন্দ্র করে ভারত ও পাকিস্তানের বিবাদ অব্যাহত রয়েছে।

  • রাষ্ট্রসংঘ কাশ্মীর বিভাজনের প্রস্তাব করেছিল।

১৯৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ

  • ১৯৬৫ সালে কাশ্মীর সমস্যা নিয়ে উভয় দেশের মধ্যে যুদ্ধ সংঘটিত হয়।
  • উভয় দেশ কাশ্মীরকে নিজেদের ভূখণ্ড বলে দাবি করে।
  • রাষ্ট্রসংঘের হস্তক্ষেপে এই যুদ্ধের অবসান ঘটে।
  • ভারতের প্রধানমন্ত্রী লাল বাহাদুর শাস্ত্রী ও পাকিস্তানের জেনারেল আইয়ুব খান তাসখন্দ চুক্তি স্বাক্ষর করেন।

তাসখন্দ চুক্তি: ১৯৬৬ সালের ১০ জানুয়ারি উজবেকিস্তানের রাজধানী তাসখন্দে পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে সম্পাদিত একটি চুক্তি, যা ১৯৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সমাধান করে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী লাল বাহাদুর শাস্ত্রী ও পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি আইয়ুব খানের মধ্যে এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। জাতিসংঘ, আমেরিকা ও সোভিয়েতের চাপে তাসখন্দ সম্মেলনে ভারত ও পাকিস্তানকে তাদের পূর্বের চুক্তির বাধ্যবাধকতা মেনে চলতে বাধ্য করেছিল। এই চুক্তি অনুসারে দুটি দেশ ১৯৬৬ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে পূর্বাবস্থায় চলে যেতে সম্মত হয়েছিল। উভয় নেতা জম্মু-কাশ্মীরের বিভাজনের সীমারেখায় যুদ্ধবিরতি পালন করতে একমত হয়েছিলেন।

বাংলাদেশের যুদ্ধ - ১৯৭১

  • দ্বিমেরুকেন্দ্রিক বিশ্বে গোষ্ঠী নিরপেক্ষ নীতি গ্রহণ করেন ভারত আঞ্চলিক পর্যায়ে পরাশক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করার চেষ্টা করে।
  • পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালি ভোটাররা দীর্ঘদিন ধরে পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকের দ্বারা দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক হিসেবে গণ্য হওয়ার বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছিলেন।
  • ১৯৭১-এর প্রথমদিকে পাকিস্তানী বাহিনী শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেফতার করে ও পূর্ব Pাকিস্তানের জনগণের উপর এক সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে।
  • এর জবাব হিসেবে জনগণ পাকিস্তানের হাত থেকে বাংলাদেশকে মুক্ত করার জন্য এক সংগ্রাম শুরু করে।
  • পাকিস্তানের জন্য সমর্থন আসে যুক্তরাষ্ট্র ও চীন থেকে।
  • যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তান-চীন সমঝোতার জবাব দেওয়ার জন্য ভারত সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে শান্তি বন্ধুত্বের চুক্তি স্বাক্ষর করে।
  • কয়েক মাসের কূটনৈতিক উত্তেজনা ও সামরিক প্রস্তুতির পর ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরে পুরোপুরি যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়।
  • ১০ দিনের মধ্যে ভারতীয় বাহিনী তিন দিক থেকে ঢাকা ঘিরে ফেলে এবং প্রায় ৯০,০০০ পাকিস্তানী সৈন্য আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়।
  • বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ভারত একতরফা যুদ্ধ বিরতি ঘোষণা করে।
  • ১৯৭২ সালের ৩রা জুলাই ইন্দিরা গান্ধী ও জুলফিকার আলী ভুট্টোর মধ্যে স্বাক্ষরিত সিমলা চুক্তির মাধ্যমে শান্তি পুনঃস্থাপন নিশ্চিত হয়।
  • ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ যুদ্ধ আরম্ভ হয়েছিল।
  • ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করে।
  • ১৯৭১ সালে ভারত-রুশ শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল।
  • ১৯৭২ সালে সিমলা চুক্তি হয়েছিল।
  • সিমলা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল ইন্দিরা গান্ধী ও জুলফিকার আলী ভুট্টোর মধ্যে।
  • সিমলা চুক্তির দুটি শর্ত:
    • ভারত ও পাকিস্তান উভয় দেশই তাদের বিরুদ্ধে আলোচনার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান করবে।
    • উভয় রাষ্ট্রই একে অন্যের প্রতি বল প্রয়োগ করবে না।

সিমলা চুক্তির উপর একটি সংক্ষিপ্ত টীকা

১৯৭১ সালে সংঘটিত বাংলাদেশ যুদ্ধের পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্পাদিত চুক্তিকে সিমলা চুক্তি নামে জানা যায়। ১৯৭২ সালের জুন মাসে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টো ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী সিমলায় এক শীর্ষ বৈঠকে মিলিত হয়ে দীর্ঘ আলোচনার পর এই শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর করেন। এই চুক্তির গুরুত্বপূর্ণ শর্ত ছিল নিম্নরূপ:

  • ভারত ও পাকিস্তান উভয় দেশই তাদের বিরুদ্ধে আলোচনার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান করবে।
  • উভয় রাষ্ট্রই একে অন্যের প্রতি বল প্রয়োগ করবে না।
  • উভয় দেশই পরস্পর জাতীয় ঐক্য, ভৌগলিক অখন্ডতা, রাজনৈতিক স্বাধীনতা ও সার্বভৌম ক্ষমতার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করবে।

কার্গিল যুদ্ধ - ১৯৯৯

  • ১৯৯৯ সালে পাকিস্তানের মুজাহিদীন বলে দাবি করা সৈন্যরা ভারতীয় দিকের মাস্ক, দ্রাস, কাকসর এবং বাটালিক অঞ্চলসমূহে নিয়ন্ত্রণ রেখা (LoC) অতিক্রম করে।
  • এই দখলে পাকিস্তানের সৈন্য বাহিনী জড়িত বলে সন্দেহ করে ভারতীয় বাহিনী এর বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া দেখায়।
  • ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সংঘটিত এই সংঘর্ষকে কার্গিল যুদ্ধ নামে জানা যায়।
  • এই সংঘর্ষ ১৯৯৯ সালের মে ও জুন মাসে চলে।
  • কার্গিল সংঘর্ষ পৃথিবীব্যাপী মনোযোগ আকর্ষণ করে। কারণ, এই ঘটনার মাত্র এক বছর আগে ভারত ও পাকিস্তান উভয় দেশই পারমাণবিক সক্ষমতা অর্জন করেছিল।
  • ১৯৯৯ সালের জুন মাসের মধ্যে কার্গিল বিবাদ হয়েছিল।

ঘ - ভারতের পারমাণবিক নীতি

  • নেহেরু পারমাণবিক অস্ত্রের বিরোধী ছিলেন। সুতরাং তিনি মহাশক্তিধর দেশগুলোকে ব্যাপক পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণের জন্য অনুরোধ করেছিলেন।
  • ভারত শান্তিপূর্ণ ব্যবহারের জন্য পারমাণবিক শক্তি উৎপাদন করতে ইচ্ছুক ছিল।
  • নেহেরুর শিল্পোন্নয়ন পরিকল্পনার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল পরমাণু পরিকল্পনা, যা ১৯৪০ দশকের শেষদিকে হোমি জে. ভাবার পরিচালনায় শুরু হয়।
  • ১৯৬৪ সালে কমিউনিস্ট চীন পরমাণু বিস্ফোরণ ঘটায়। তখন পাঁচটি পরমাণু শক্তিধর দেশ (যুক্তরাষ্ট্র, ইউএসএসআর, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স এবং চীন; যারা আবার রাষ্ট্রসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য) পৃথিবীর বাকি দেশগুলোর ওপর ১৯৬৮ সালের 'পারমাণবিক অস্ত্র নিষিদ্ধকরণ চুক্তি' (NPT) চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। ভারত এই চুক্তিকে পক্ষপাতমূলক মনে করত এবং তা স্বাক্ষর করতে অস্বীকার করে।
  • ১৯৭৪ সালে ভারতের দ্বারা প্রথম পরমাণবিক বিস্ফোরণ ঘটানো হয়।
  • ১৯৭৩-এর আরব-ইসরাইল যুদ্ধের ফলস্বরূপ সমস্ত পৃথিবী তেল অভিঘাত দ্বারা প্রভাবিত হয়, আরব দেশগুলি কর্তৃক তেলের দাম বিপুল পরিমাণে বাড়ানোর জন্য। এর ফলস্বরূপ ভারতে অর্থনৈতিক বিশৃঙ্খলা দেখা দেয় ও উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি ঘটে। এমতাবস্থায় ১৯৭৪ সালে ভারতের পরমাণু বিস্ফোরণ ঘটানোর ব্যাপার নিয়ে দেশে এবং বিদেশে অনেক সমালোচনা হয়।
  • ১৯৯৮ সালে ভারত দ্বিতীয়বার পরমাণু বিস্ফোরণ ঘটায়।
  • রাজস্থানের মরু অঞ্চল পোখরানে ভারত পরমাণু বিস্ফোরণ ঘটায়।
  • ডঃ হোমি জাহাঙ্গীর ভাবাকে ভারতের পারমাণবিক নীতির পথপ্রদর্শক হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়।
  • ১৯৬৪ সালে কমিউনিস্ট চীন পরমাণু বিস্ফোরণ ঘটায়।
  • ১৯৭৪ সালে ভারত প্রথম পরমাণু বিস্ফোরণ ঘটায়।
  • ১৯৬৮ সালে 'পারমাণবিক অস্ত্র নিষিদ্ধকরণ চুক্তি' (NPT) স্বাক্ষরিত হয়েছিল।
  • সর্বব্যাপী পারমাণবিক পরীক্ষা নিষিদ্ধকরণ চুক্তি (CTBT) ১৯৯৬ সালের ১০ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ সভায় গৃহীত হয়েছিল।

NPT ও CTBT-এর সম্পূর্ণ নাম:

  • NPT = Nuclear Non-Proliferation Treaty
  • CTBT = Comprehensive Test Ban Treaty

অস্ত্র সম্প্রসারণ নিষিদ্ধকরণ চুক্তির ক্ষেত্রে ভারতের অবস্থান

আন্তর্জাতিক চুক্তিসমূহের ক্ষেত্রে ভারতবর্ষ সর্বদা নিজস্ব ভূমিকা পালন করে আসছে। ১৯৬৮ সালের ১ জুলাই 'পারমাণবিক অস্ত্র নিষিদ্ধকরণ চুক্তি' (NPT)-এর সাক্ষরসূচনা হয়েছিল। রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য অথচ ইতিমধ্যে পরমাণু শক্তির অধিকারী হওয়া পাঁচটি রাষ্ট্র (যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, রাশিয়া ও গণচীন) পৃথিবীর অন্যান্য দেশের উপর এই চুক্তি চাপিয়ে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু ভারত এই চুক্তিকে বৈষম্যমূলক বলে বিবেচনা করে এবং তা স্বাক্ষর করতে অস্বীকার করে।

উক্ত বিষয় থেকে এটা পরিষ্কার যে, আন্তর্জাতিক চুক্তির ক্ষেত্রে ভারত সর্বদা সমতার উপর গুরুত্ব দিয়ে আসছে। ১৯৯৮ সালে ভারতের পারমাণবিক পরীক্ষার পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানের অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার সম্মুখীন হলেও ভারত নিজের স্বাধীন অস্তিত্বকে বিসর্জন দেয়নি।

ভারতের পারমাণবিক নীতির উপর একটি সংক্ষিপ্ত টীকা

ভারতের পারমাণবিক নীতি: ভারত শান্তিপূর্ণ ব্যবহারের জন্য পারমাণবিক শক্তি উৎপাদন করতে ইচ্ছুক ছিল। ১৯৪০ দশকের শেষদিকে হোমি জে. ভাবার পরিচালনায় ভারতে পরমাণু পরিকল্পনার সূত্রপাত হয়। ১৯৬৮ সালে রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য অথচ ইতিমধ্যে পরমাণু শক্তির অধিকারী হওয়া পাঁচটি রাষ্ট্র (যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, রাশিয়া ও গণচীন) পৃথিবীর অন্যান্য দেশের উপর NPT 'পারমাণবিক অস্ত্র নিষিদ্ধকরণ চুক্তি' চাপিয়ে দিতে চেয়েছিল। ভারত এই চুক্তিকে বৈষম্যমূলক বলে বিবেচনা করে এবং তা স্বাক্ষর করতে অস্বীকার করে।

উক্ত বিষয় থেকে এটা পরিষ্কার যে, আন্তর্জাতিক চুক্তির ক্ষেত্রে ভারত সর্বদা সমতার উপর গুরুত্ব দিয়ে আসছে। ১৯৯৮ সালে ভারতের পারমাণবিক পরীক্ষার পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানের অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার সম্মুখীন হলেও ভারত নিজের স্বাধীন অস্তিত্বকে বিসর্জন দেয়নি।

Post Top Ad

Pages

SoraTemplates

Best Free and Premium Blogger Templates Provider.

Buy This Template